ঢাকা ২১শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৩ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি
প্রকাশিত: ৯:২৫ পূর্বাহ্ণ, মে ২, ২০১৮
যে হাত দু’টি হতে পারতো ভিক্ষুকের হাত, সেই দু’টি হাতকে কর্মের হাতে পরিণত করেছেন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ঈশ্বরবা গ্রামের মৃত ছামেদ আলীর ছেলে শারীরিক প্রতিবন্ধী আব্দুর রহমান (৪৮)। প্রায় ২৫ বছর আগে জীবিকার তাগিদে বাড়ির কাছেই রাস্তার ধারে ছোট একটি টোঙ দোকানে ব্যবসা শুরু করেন তিনি।
চা, পান, বিড়ি-সিগারেট বিক্রি করে সামান্য যা আয় হয়, তা দিয়ে অর্ধাহারে কাটাতে হয় পরিবারের সদস্যদের। দোকানে দীর্ঘ সময় ধরে বসে থাকায় পা দু’টি সম্পূর্ণরুপে অকেজো হয়ে যায়। বর্তমানে প্রতিদিন বস্তার ওপর বসিয়ে স্ত্রী ও মেয়ে তাকে দোকানে দিয়ে যায়। আবার রাতে একইভাবে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে।
প্রতিবন্ধী মানেই অন্যের গলগ্রহ হয়ে বেঁচে থাকা কিংবা আত্মসম্মানবোধকে জলাঞ্জলী দিয়ে দান-দক্ষিণা পাওয়ার আশায় মানুষের দ্বারে-দ্বারে ছুটে চলা-এটি মানতে নারাজ ছিলেন তিনি। সমাজের আর দশজন প্রতিবন্ধীর মতো শারীরিক অক্ষমতার কারণে রোজগারের জন্য ভিক্ষাবৃত্তিতে না নেমে জীবিকার অন্বেষণে টোঙ দোকানে ব্যবসা করেন ।
আব্দুর রহমান জানান, তিন মাস বয়সে তিনি পোলিও রোগে আক্রান্ত হন। পোলিও রোগে তার হাত ও পা চিকন ও বাঁকা হয়ে যায়। তখনকার দিনে পোলিও রোগ সম্পর্কে ধারণা না থাকায় বাবা-মা ভেবেছিল বাতাস লেগেছে। বাতাসের জন্য ঝাঁড় ফুঁকও করিয়েছিলেন , কিন্ত ভালো হয়নি।পঁচিশ ২৫বছর বয়স পর্যন্ত লাঠির সাহায্যে চলাচল করতে পারতেন। হাত-পায়ে শক্তি না থাকায় মাঠের কাজ করতে পারতেন না। বিয়ের পর জীবিকার তাগিদে চা-পানের ব্যবসা শুরু করেন।
গ্রামের দোকানে চা-পান খুব একটা বিক্রি না হলেও প্রতিদিন দোকান থেকে প্রায় ১’শ থেকে দেড়’শ টাকা আয় হয়। এই সামান্য আয়ে তাকে পরিবারের ৪ সদস্যের প্রয়োজন মেটাতে হয়। আব্দুর রহমানের দুই সন্তানের মধ্যে বড় মেয়ে আকলিমা ১০ম শ্রেণিতে পড়ে। ছেলে আলামিন ৮ম শ্রেণিতে পড়ে। ১৪বছর বয়সী আলামিন-ই এখন তার একমাত্র ভরসা।
প্রতিদিন কালীগঞ্জ শহর থেকে পান, বিড়ি-সিগারেট ও চা পাতা কিনে আনতে হয় তাকে। বাজার থেকে দোকানের মালামাল আনার পরে স্কুলে যায় সে। স্কুল শেষে বিকালে দোকানে বসে বাবাকে সাহায্য করে আলামিন। আব্দুর রহমান জানান, ২৫বছর পর্যন্ত লাঠির সাহায্যে চলতে পারলেও দোকানে ব্যবসা করতে এসে পায়ের শক্তি লোপ পেতে থাকে। এক পর্যায়ে সম্পূর্ণ অকজো হয়ে পড়ে দু’টি পা। কোন রকম সচল থাকা হাত দুটি দিয়ে চা-পান তৈরি করতে পারেন। মাঝে মধ্যে অসুস্থ হলে দোকানে আসতে পারেন না। এতে তার হাত দু’টি আর কাজ করে না।
আব্দুর রহমানের চিন্তা পায়ের মত হাত অকেজো হয়ে গেলে কিভাবে সংসার চালাবেন। অর্থাভাবে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া জোটেনি তার। এদিকে এনজিও থেকে লোন নিয়ে দোকানের মালামাল ক্রয় করেন। সপ্তাহে সপ্তাহে লোনের টাকা পরিশোধ করতে হিমশিম খেতে হয় তাকে। চরম অর্থকষ্টে দিনাতিপাত করা আব্দুর রহমানের অন্যের সাহায্য ছাড়া বাইরে যেতে ইচ্ছে হয়। কিন্তু হুইল চেয়ার কেনার সামর্থ তার নেই ।
আব্দুর রহমান জানান, তার পা এমন যে হুইল চেয়ারে বসেও চলাফেরা করতে পারেন না। তিনি আরো জানান, সমাজের বিত্তবানেরা সাহায্যের হাত বাড়ালে দোকানে নিত্য প্রয়োজনীয় মালামাল তুলতে পারতেন। এতে বাড়তি আয় হতো যা দিয়ে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে একটু সুখে থাকতে পারতেন।
সম্পাদক – মাহমুদ হাসান টিপু
নির্বাহী সম্পাদক – পিন্টু লাল দত্ত
বার্তা সম্পাদক – সোহাগ আলী
www.jhenaidahsongbad.com
jhenaidahsongbad@gmail.com
প্রকাশক- জাহিদুল ইসলাম বাবু মিয়া
ব্যবস্থাপনা পরিচালক – মোঃ মজিবুর রহমান সরকার
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী সড়ক,ঝিনাইদহ
০১৭১১২৬০৩৯৩ / ০১৭১১৪৫২০৫১
Design and developed by zahidit.com