ঝিনাইদহ-২ আসনটি পুনরুদ্ধার করতে চায় আ’লীগ ও বিএনপি

প্রকাশিত: ৪:১৮ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ২৩, ২০১৭

ঝিনাইদহ-২ আসনটি পুনরুদ্ধার করতে চায় আ’লীগ ও বিএনপি

মাহমুদ হাসান টিপু, ঝিনাইদহ ঃ

ঝিনাইদহ জেলার চারটি আসনের মধ্যে সদর আসনটি হলো ঝিনাইদহ-২ । একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আ’লীগ ও বিএনপি উভয় দল চাই এই আসনটি পুনররুদ্ধার করতে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে সদ্য আ’লীগে যোগ দেওয়া স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহজীব আলম সিদ্দিকী সমির নিকট পরাজিত হন আ’লীগের প্রার্থী মোঃ সফিকুল ইসলাম অপু। এর আগে ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌাকা প্রতিকের প্রার্থী মোঃ সফিকুল ইসলাম অপুর নিকট ১৯৯১ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত ৪ বার নির্বচিত বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী মসিউর রহমান ধরাশায়ী হন। বর্তমান সংসদ সদস্য সমি আ’লীগে যোগদান করলেও দশম সংসদ নির্বাচনে আ’লীগ প্রার্থী তার নিকটই ধরাশায়ী হয়েছিলেন। সেই বিবেচনায় ্একাদশ সংসদ নির্বাচন আ’লীগ ও বিএনপির উভয় দলের জন্য মুলত আসনটি পুনরুদ্ধারের লড়াই হয়ে দাড়িয়েছে।


একাদশ সংসদ নির্বাচনে এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনায়ন পেতে লড়ছেন অন্তত ০৪ জন প্রার্থী। সেখানে বিএনপির প্রার্থী ০৩ জন ও জাতীয় পার্টির একজন মনোনায়ন প্রত্যাশী হিসাবে মাঠে কাজ করছেন। এরই মধ্যে বড় দুই দলের প্রার্থীরা মাঠে তৎপরতা শুরু করে দিয়েছেন। গত রমজান থেকে সম্ভাব্য প্রার্থীদের ঈদ শুভেচ্ছা কার্ড, রমজানের ইফতার মাহফিলসহ লিফলেট, পোস্টার বিতরণসহ নানাভাবে চলছে প্রচারণা কার্যক্রম। সেই ক্ষেত্রে এই আসনে জামায়াতসহ কোন ইসলামী ও বাম দলের নির্বাচনি তৎপরতা চোঁখে পড়ছেনা ।

 

ঝিনাইদহের চারটি আসনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচিত আসন হচ্ছে ঝিনাইদহ-২। এ আসনের বর্তমান এমপি আওয়ামী লীগে সদ্য যোগ দেওয়া মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠন, স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম নেতা নূরে আলম সিদ্দিকীর ছেলে তাহজীব আলম সিদ্দিকী সমি। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে জয়লাভ করেন।

ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ১৩ টি ও হরিণাকু-ুুর ৮টিসহ ২১টি ইউনিয়ন এবং দুটি উপজেলার ২টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত ঝিনাইদহ-২ আসন। ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে এই আসনে আ’লীগের প্রার্থী ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা নূরে আলম সিদ্দিকী জয় লাভ করে। এর পর থেকে এই আসনটি আ’লীগের হাত ছাড়া হয়ে যায় । রাজনৈতিক পট পরিবর্তন ঘটলে ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে আইডিয়াল প্রার্থী মওলানা নুরুন্নবী ছামদানি এই আসনে জয়লাভ করে। পরবর্তিতে এরশাদ সরকার আমলে ১৯৮৪ ও ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী যথা ক্রমে মরহুম আশরাফুল আবেদীন আশা ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী মরহুম আনোয়ার জাহিদ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তার পর ১৯৯১ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আসনটি বিএনপির দখলে ছিল। কিন্তু ২০০৮ সালের নির্বাচনে চার বারের নির্বাচিত (বিতর্কিত ৬ষ্ট জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ) সংসদ সদস্য বর্তমান বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জেলা বিএনপির সভাপতি শক্তিশালী প্রার্থী মসিউর রহমানকে জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য সফিকুল ইসলাম অপু প্রথমবারের মতো পরাজিত করেন। তবে সফিকুল ইসলাম অপুু গত সংসদ নির্বাচনে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা নূরে আলম সিদ্দিকীর ছেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহজীব আলম সিদ্দিকী সমির কাছে পরাজিত হন।

তাহজীব আলম সিদ্দিকী সমি সম্প্রতি আওয়ামী লীগে যোগদান করেছেন। যে সুত্রে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আ’লীগের প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন প্রত্যাশী বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে এমপি সমির ব্যাক্তিগব সহকারী মোঃ কামাল হোসেনের মাধ্যমে তিনি সমকালকে জানান তিনি যেহেতু আ’লীগে যোগদান করেছেন সেহেতু তিনি আগামী নির্বাচনে আ’লীগের প্রার্থী হিসাবে মনোনায়ন চাইবেন। তিনি জানান ইতিমধ্যে তিনি তৃনমুল নেতা কর্মীদের সাথে মতবিনিময়,সভা-সমাবেশ ও জনসংযোগ করে চলেছেন। একই সাথে দলিয় সকল কার্যক্রমে সক্রিয় অংশ গ্রহন করছেন। তিনি আশা করেন গত নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে জয়লাভ করেছিলেন সেহেতু দলের মনোনায়ন ও সমর্থন পেলে তিনি এবারও আ’লীগের প্রার্থী হিসাবে সহজে জয়লাভ করবেন। এই ক্ষেত্রে দলিয় সিদ্ধান্তকেই তিনি মনে প্রানে গ্রহন করবেন বলে জানান।

অন্য দিকে বিগত নির্বাচনে আ’লীগের পরাজিত প্রার্থী সফিকুল ইসলাম অপু থেমে নেই । পর পর দু’বার দল তাকে মনোনায়ন দেওয়ায় এবারো মনোনায়ন পেতে তিনি মরিয়া। নির্বাচনী এলাকায় তারও সৎ রাজনীতিক হিসেবেও সুনাম রয়েছে বলে অনেকে মনে করেন। নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন দল তাকে দুই- দুই বার মনোনায়ন দিয়েছেন । ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম সংসদ নির্বাচনে প্রথমবার মনোনায়ন পেয়ে বিএনপি থেকে চার বার নির্বাচিত (বিতর্কিত ৬ষ্ট জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ) সাবেক সংসদ সদস্য বর্তমান বিএনপির কেন্দ্রিয় নেতা ও জেলা বিএনপির সভাপতি শক্তিশালী প্রার্থী মসিউর রহমানকে প্রথমবারের মতো পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হই। এছাড়া তিনি অভিযোগ করেন গত নির্বাচনে তার জয় সুনিশ্চিত থাকলেও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তার জয়কে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। তিনি দাবী করেন দলের অনেক প্রবীন নেতা তার মনোনায়নের পক্ষে কাজ করছেন । তিনি আশা করেন এবারো তিনি দলিয় মনোনায়ন পাবেন এবং জয়লাভ করবেন। তবে দলের সিদ্ধান্তই যেটাই হোক সেটাই তিনি মেনে নিবেন ।

অন্যদিকে এই মুহুর্তে তৃণমুল নেতা-কর্মীদের মুখে জেলা আওয়ামী লীগের কান্ডারী হিসাবে যার নামটি বার বার উচ্চরিত হচ্ছে তিনি হলেন জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ঝিনাইদহ পৌর মেয়র সাইদুল করিম মিন্টু । দলিয় নেতা-কর্মীদের বক্তব্য ইতি মধ্যে তিনি নবীন ও প্রবীনদের নিয়ে গঠিত জেলা আওয়ালীগের নেতাদের সাংগঠনিক ভাবে গতিশীল করেছেন। এর মধ্যে তার নেতৃত্বে অধিকাংশ ইউনিয়ন ও পৌরসভার ওয়ার্ড আ’লীগের সম্মেলন সম্পন্ন হয়েছে। তার নেতৃত্বে কয়েকজন ছাড়া অধিকাংশ নেতা-কর্মী আজ ঐক্যবদ্ধ ভাবে কাজ করছেন। এই অবস্থায় তৃণমুল নেতা-কর্মীসহ জেলার অধিকাংশ প্রবীনও নবীন নেতা-কর্মীদের মধ্য থেকে দাবী উঠেছে আগামী সংসদ নির্বাচনে সাইদুল করিম মিন্টুকে ঝিনাইদহ-২ আসনে আ’লীগের প্রার্থী হিসাবে মনোনায়ন দেওয়া হোক।

এ বিষয়ে সাইদুল করিম মিন্টুর বক্তব্য তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তাান। ব্যাক্তি জীবনে অনেক চড়াই-উত্তরাইয়ের মধ্যেও তিনি ছাত্র রাজনীতি থেকে আজ পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। বিগত দিনে আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে থেকেছেন। জেল-জুলুম, হামলা-মামলার শিকার হয়েছেন তবুও দলিয় আদর্শ থেকে বিচ্যুতি হননি। তিনি আরো বলেন মেয়র হিসাবে ঝিনাইদহ পৌরবাসীর কল্যানে কাজ করছেন। তিনি একজন রাজনীতিবীদ হিসাবে বৃহত্তর জনগোষ্ঠির কল্যানে কাজ করতে চান যে কারনে আগামী সংসগ নির্বাচনে তৃণমুল নেতা-কর্মীরা চাইলে তিনি দলের প্রার্থী হিসাবে মনোনায়ন চাইবেন। তিনি দৃড় কন্ঠে বলেন দল ও নেত্রীর সিদ্ধান্তই তার কাছে বড়। আর সেটাই তিনি মেনে চলবেন।

এদিকে জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি শিল্পপতি নাসের শাহরিয়ার জাহেদী মহুল ঝিনাইদহ-২ আসন থেকে মনোনায়ন চাইতে পারেন পালেন দলের একটি সূত্র জানায় । সূত্রটি আরও জানায়, এলাকায় ক্লীন ইমেজ ও সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান মহুল এলাকায় নিজের একটি জায়গা তৈরী করেছেন। তিনি তার জাহেদী ফাউন্ডেশন দিয়ে দিনের পর দিন একপ্রকার নিজের মতো করে মানুষের জন্যে কাজ করে চলেছেন। পর পর কয়েক বছর রোজার ঈদের সময় কয়েক হাজার লোককে চাল, ডাল, তেল দিয়ে তিনি এলাকায় বেশ পরিচিত সুধী জন হিসাবে।

 

অন্যদিকে এই আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় প্রথম যে নামটি উচ্চারত হচ্ছে তিনি হলেন বিএনপির চেয়ারপাসনের উপদেষ্টা ও জেলা বিএনপির সভাপতি মোঃ মসিউর রহমান। তিনি ১৯৯১ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আসনটি থেকে টানা চার বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আ’লীগের গণ জোয়ারে নৌকার প্রার্থী সফিকুল ইসলাম অপুর নিকট পরাজিত হন। একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে তার সাথে কথা বলা হলে তিনি বলেন তিনি ঝিনাইদহ-২ আসন থেকে টানা চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ওই সময়ে তিনি ঝিনাইদহে ব্যাপক উন্নায়ন করেছেন। আজ জেলা শহরসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় যে সকল উন্নায়নের চিত্র দেখা যায় তা সবই তার প্রচেষ্টায় স্থাপিত হয়েছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন নবম সংসদ নির্বাচনে সুক্ষ কারচুপির মাধ্যমে তাকে পরাজিত করা হয়েছিল। তার দল যদি আগামী নিব্যাচনে অংশ গ্রহন করে তাহলে তিনি অবশ্যই দলিয় মনোনায়ন চাইবেন এবং দলের সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে কাজ করবেন। এছাড়া নির্বাচন নিরপেক্ষ হলে আবারো এ আসন থেকে বিএনপির প্রার্থিকে বিজয়ী করে এলাকাবাসী দেখাবেন এলাকার মানুষ বিএনপিকেই ভালবাসে।

এই আসনে বিএনপির আরো একজন প্রার্থি হলেন সাবেক ছাত্রনেতা ,জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি ও বর্তমানে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মীর রবিউল ইসলাম লাবলু। তিনি আগামী সংসদ নির্বাচনে ঝিনাইদহ-২ আসন থেকে মনোনায় চাইবেন এমনটি জানিয়েছেন দলের ত্যাগী অনেক নেতা-কর্মী। এই উদ্দেশ্যে তিনি ঝিনাইদহ ও হরিণাকু-ু এলাকায় গণসংযোগ করে চলেছেন। এ বিষয়ে তিনি সমকালকে জানান তিনি বিএনপির জন্ম লগ্ন থেকে দলের সাথে রয়েছেন। তিনি ছাত্র রাজনীতি দিয়ে দলের সাথে যুক্ত হয়েিেছলেন । পরে জেলা যুবদলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি আরো বলেন সৌরাচার বিরোধী আন্দোলনের সময় একাধিকবার কারা বরণসহ পুলিশি নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। কিন্তু এরপরও রাজনৈতিক দুর্বিৃত্তয়ানের কাছে পরাস্থ হয়ে জেলা রাজনীতি থেকে সরে আসতে বাধ্য হন। তার সাংগঠনিক দক্ষতায় ্ঈর্ষান্বিত হয়ে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ঝিনাইদহের রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। এর পরও তিনি যুব দলের খুলনা বিভাগিয় সাংগঠনিক সম্পাদক, কেন্দ্রীয় সহ সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। আজ তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি মনে করেন দলের তৃণমুল নেতা-কর্মিরা আজ পরিবর্তন চাই। যে কারনে তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে আগামী সংনদ নির্বাচনে তিনি একজন প্রার্থী হিসাবে মনোনায়ন চাইবেন। তবে সর্বশেষ তিনি মনোনায়নের ক্ষেত্রে মন্তব্য করেন যে , দলের হাই কমান্ড যাকে মনোনায়ন দিবেন তিনি সেই সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে কাজ করবেন।

এদিকে জেলা জাতীয় পার্টি (এরশাদ) এর জেলা সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা ড.এম হারুর অর রশিদ জানিয়েছেন তিনি জনগনের জন্য রাজনীতি করেন। তার দল একক বা জোটবদ্ধ ভাবে নির্বাচন করলে তিনি মনোনায়ন পাবনে বলে দাবী করেন। তিনি বলেন আমি সকল সময় জনগণের পাশে আছি এবং থাকবো।

 

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ