নিজের প্রতি আস্থাই বিসিএসে সফলতার মূলমন্ত্র, শৈলকুপার গর্ব জাকারিয়া জিকু

প্রকাশিত: ৭:১৮ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০১৭

নিজের প্রতি আস্থাই বিসিএসে সফলতার মূলমন্ত্র, শৈলকুপার গর্ব জাকারিয়া জিকু

নিজের প্রতি অবিচল আস্থা আর বাবা-মায়ের আশীর্বাদ নিয়ে পথচলা শুরু তার। এই আস্থা আর বিশ্বাসই তাকে নিয়ে এসেছে এতদুর। ২৯তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে নিয়োগ পেলেও বাবার ইচ্ছায় পরে ৩০তম বিসিএস উত্তীর্ণ হয়ে যোগ দেন পুলিশ ক্যাডারে।

তবে এ পেশায় এসে অন্যের অন্যায় কাজকে সমর্থন না করায় বদলি হতে হয়েছে এক জেলা থেকে অন্য জেলায়। তারপরও অন্যায়ের সাথে আপোষ করেনি তরুণ এই পুলিশ কর্মকতা। জীবনের ছোট-ছোট ব্যর্থতাকে তিনি নিয়েছেন শক্তি হিসেবে। সেখানেই পেয়েছেন নতুন উদ্যম, নতুন শক্তি।

এভাবে প্রতিমুহূর্তে নিজেকে পরিপূর্ণ করে প্রতিনিয়ত সামনে এগিয়ে চলা ব্যক্তিটির নাম মো: জাকারিয়া রহমান জিকু। ৩০তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে যোগ দিয়ে এখন কর্মরত আছেন রংপুর বিভাগে সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার হিসেবে।

ঝিনাইদহের শৈলকূপার ছেলে জিকু স্বপ্ন দেখতেন ঢাকা বিশ্বাবিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে পড়ার। এলাকার এক বড় ভাইকে দেখে অনুপ্রাণিত হন তিনি। খেলাধুলা, ঘুরে-বেড়ানো, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেয়া এসব ছিল তার নিত্যদিনের সঙ্গী। আর তাই এসএসসি পর্যন্ত বাবা-মায়ের কথামতো বিজ্ঞান বিভাগে পড়লেও সারাদিন পড়াশোনা, ৭-৮ জন টিচারের কাছে দৌড়ানোটা হাসফাঁস লাগতে শুরু করে জিকুর। সেজন্য এইচএসসিতে বিভাগ বদলে চলে যান মানবিক বিভাগে।ইচ্ছা ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বেন। সেখানে পড়ার সুযোগ না হলে বাড়িতে কৃষিকাজ করবেন আর কুষ্টিয়া ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বেন। সেজন্য এ দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া অন্য কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনও করেননি তিনি। তবে না, শেষ পর্যন্ত কৃষিকাজ করতে হয়নি জিকুকে।

 

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে পড়ার সুযোগ হয় মেধাবী এ কর্মকর্তার। শুরু হয় এক নতুন জীবন। বন্ধু আড্ডা, গান, পড়াশোনা এভাবেই চলছিল তার। চতুর্থ বর্ষে পড়ার সময় কিছু জরুরি কাগজ সত্যায়নের প্রয়োজন পড়ে জিকুর। চলে যান এলেনবাড়ি বিআরটিএ অফিসে। সেখানে এক সহকারি পরিচালকের রুমে যান সত্যায়নের জন্য। তবে কর্মকর্তার রুমে যাওয়া মাত্রই সেই কর্মকর্তা তাকে বলেন, ‘‘আমি কি আপনার কাগজ সত্যায়িত করার জন্য এখানে বসে আছি?’’

 

 

সেদিন ওই কথা শুনে খুব আঘাত পান জিকু। বের হয়ে আসেন সেই কর্মকর্তার রুম থেকে। তবে বের হওয়ার সময় দৃঢ়স্বরে সেদিন তাকে শুধু একটি কথাই বলেছিলেন, ‘‘আমি আপনার চেয়ে বড় অফিসার হবো।’’

 

 

এরপরই শুরু হয় জিকুর বিসিএসের প্রস্তুতি। ভেতরে ভেতরে জেদ নিয়ে শুরু করেন পড়াশোনা। প্রথম অংশ নেন ২৯তম বিসিএসে। নিয়োগ পান প্রশাসন ক্যাডারে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে যোগ দেন নীলফামারী জেলায়। সেখানে ৭ মাস পর চাকরির পর যখন জিকু বাড়িতে যান; দূর থেকে দেখতে পান বাবা একটি চায়ের দোকানে বসে চা খাচ্ছেন। কাছে যেতেই বাবা বলে ওঠেন ‘‘নাহ আমার ছেলেকে পুলিশের পোশাকেই বেশি স্মার্ট লাগবে’’।

 

 

কথাটি মনে গেঁথে যায় জিকুর। তখন ৩০তম বিসিএসের ফলাফল প্রক্রিয়াধীন। আর তার কিছুদিন পরই ফলাফল প্রকাশের পর দেখতে পান পুলিশ ক্যাডারে তার রোল নম্বরটি। খুশিতে আত্মহারা হয়ে যান। ‘‘ভীষণ ভালোলাগার অনুভূতি কাজ করতো সেসময় মনে হতো আমি আমার বাবা- মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছি। সে অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো না।’’

 

 

২৯তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে নিয়োগ পেয়ে প্রথম ফোনকলটি মাকেই করেছিলেন তিনি। মাকে আমি বলি: “মা তোমার ছেলেতো ম্যাজিস্ট্রেট হয়ে গেলো। একথা শুনে মা খুশিতে চিৎকার দিয়ে যেভাবে কেঁদেছিলেন সেই কান্নার আওয়াজ এখনও শুনতে পাই আমি।’’ বাবা চলে গেছেন পৃথিবী ছেড়ে। আর তাই এই মাকেই জীবনের সব স্বাচ্ছন্দ্য আর সুখ দিতে চান জিকু।

 

খুব বেশি কৌতুহলী এ পুলিশ কর্মকর্তা। সবকিছু জানার এক অদম্য আগ্রহ তার। আর তাই সবসময়ই চেষ্টা করেন নতুন কোন কিছু হলেই তার আদি-অন্ত জানার।

 

 

প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়ে কাজ করতে চান। আর তাই কর্মজীবনে যে জেলাতেই পোস্টিং হোক না কেনো; চান সেখানে একজন করে হলেও প্রতিবন্ধীর দায়িত্ব নিতে। তাকে স্বাবলম্বী করে দিতে। জিকু মনে করেন এভাবে যদি বাংলাদেশের প্রতিটি সামর্থবান মানুষ একজন করে মানুষের দায়িত্ব নেয় তাহলেই সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে উঠবে।

 

 

বিসিএস পরীক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে এই কর্মকর্তা বলেন, নিজেকে জানাটা খুব বেশি জরুরি। নিজের দুর্বল পয়েন্টগুলো খুঁজে বের করে সে বিষয়গুলো জোর দিয়ে পড়ার পরামর্শ তার।

 

 

“প্রথমে সিলেবাসটা ভালোভাবে বুঝতে হবে। এরপর বিগত ২০ থেকে ২৫ বছরের যতো প্রশ্ন আছে সব মনদিয়ে পড়তে হবে। এতে করে প্রশ্নের ধরণ সম্পর্কে পুরোপুরি ধারণা পাওয়া যাবে। আর সেখান থেকে প্রতিবছরই প্রায় ২০ থেকে ৩০ শতাংশ প্রশ্ন কমন পড়ে থাকে।” ‍

 

 

জিকু আরো বলেন, “দুর্বল বিষয়টা জোর দিয়ে পড়তে হবে। তারপর প্রতি সপ্তাহে নিজেকে মূল্যায়ন করতে হবে। বইয়ের বাইরে বিস্তর জানার আগ্রহ থাকতে হবে। শুধুমাত্র বাজারে প্রচলিত গাইড পড়ে বিসিএস ক্যাডার হওয়া কঠিন। আর প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তর জানা না থাকলে বৃত্ত ভরাট থেকে বিরত থাকা শ্রেয়।”

 

 

কাজের প্রতি আস্থা আর বিশ্বাসই যেকোন কাজের অর্ধেক সফলতা উল্লেখ করেন তিনি পরীক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, “সময় ভাগ করে নিয়ে প্রশ্নের উত্তর দেয়াটা জরুরি। সব উত্তরের মান যেনো সমান হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। একটার উত্তর অনেক ভালো, আরেকটা মোটামুটি হলে গড় নম্বরটা কমে যায়। আর তাই সব প্রশ্ন গড়ে সমানভাবে উত্তর দেয়ার চেষ্টা করতে হবে।”

 

বিসিএস-এ মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিতে যাওয়া প্রার্থীদের প্রতি এ কর্মকর্তা পরামর্শ, “নিজের প্রথম তিনটি পছন্দ সম্পর্কে জানতে হবে বিস্তর। কারণ সেগুলো থেকে প্রশ্ন করা হয় অনেক বেশি। এছাড়াও নিজ জেলা, মুক্তিযুদ্ধ, সংবিধান, ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক ঘটনা সম্পর্কে অবহিত থাকতে হবে।”

 

 

নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ থাকাকে তিনি সফলতার চাবিকাঠি মনে করেন। সর্বোপরি নিজের প্রতি আস্থাই বিসিএসে সফলতার মূলমন্ত্র বলে উল্লেখ করেন জাকারিয়া রহমান জিকু।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

vulkan vegas, vulkan casino, vulkan vegas casino, vulkan vegas login, vulkan vegas deutschland, vulkan vegas bonus code, vulkan vegas promo code, vulkan vegas österreich, vulkan vegas erfahrung, vulkan vegas bonus code 50 freispiele, 1win, 1 win, 1win az, 1win giriş, 1win aviator, 1 win az, 1win azerbaycan, 1win yukle, pin up, pinup, pin up casino, pin-up, pinup az, pin-up casino giriş, pin-up casino, pin-up kazino, pin up azerbaycan, pin up az, mostbet, mostbet uz, mostbet skachat, mostbet apk, mostbet uz kirish, mostbet online, mostbet casino, mostbet o'ynash, mostbet uz online, most bet, mostbet, mostbet az, mostbet giriş, mostbet yukle, mostbet indir, mostbet aviator, mostbet casino, mostbet azerbaycan, mostbet yükle, mostbet qeydiyyat