জাতীয় স্মৃতিসৌধের স্থপতি সৈয়দ মঈনুল হোসেন

প্রকাশিত: ১:২৭ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ১২, ২০১৭

জাতীয় স্মৃতিসৌধের স্থপতি সৈয়দ মঈনুল হোসেন

জাতীয় স্মৃতিসৌধের স্থপতি সৈয়দ মঈনুল হোসেন। শৈলকুপার সাথে যার নাড়ির সম্পর্ক। তিনি শৈলকুপার মাটি ও মানুষের কবি গোলাম মোস্তফার নাতি। কবির ছোট মেয়ে সৈয়দা রাসিদা হক এর ছেলে তিনি। অস্কার বিজয়ী প্রথম বাংলাদেশী নাফিস তাঁর ভাগিনা।

সৈয়দ মঈনুল হোসেনের জন্ম ১৯৫১ সালের ১৭ মার্চ ঢাকায়। তাঁর পিতার নাম সৈয়দ মুজিবুল হক এবং মায়ের নাম সৈয়দা রাশিদা হক। বাবার চাকুরীর সুবাধে তাঁর জীবনের অনেকটা গুরুত্বপূর্ণ সময় কেটেছে ফরিদপুর শহরে৷ ফরিদপুর মিশন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষার শুরু হয়েছিল তাঁর৷ প্রাথমিক শিক্ষা শেষে ১৯৬২ সালে ভর্তি হন ফরিদপুর জেলা স্কুলে ৷ ১৯৬৭ সালে মাধ্যমিক পাশ করেন৷ ১৯৬৯ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেন তিনি। ১৯৭০ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপত্য বিদ্যায় (নকশা) ভর্তি হন। ১৯৭৬ সালে প্রথম শ্রেণীতে স্থাপত্য বিদ্যা পাশ করেন তিনি৷

১৯৭৬ সালের এপ্রিল মাসে ‘ইএএইচ কনসাল্টটেন্ট লিমিটেড এ জুনিয়র স্থপতি হিসাবে যোগদান করেন সৈয়দ মঈনুল হোসেন৷ কয়েক মাস পর ওই চাকরি ছেড়ে একই বছরের আগষ্টে ‘বাংলাদেশ কনসালট্যান্ট লিমিটেড’ এ জুনিয়র স্থপতি হিসাবে যোগদান করেন। তিনি বাংলাদেশের জাতীয় স্মৃতিসৌধের স্থপতি। ১৯৭৮ সালের ডিসেম্বরে এ চাকুরি ছেড়ে দিয়ে ১৯৭৯ এর জানুয়ারিতে যোগ দেন ‘স্থপতি সংসদ লিমিটেড’ এ জুনিয়র স্থপতি হিসাবে৷ ১৯৭৯ সাল থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত তিনি আরো বেশ কয়েকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জুনিয়র হিসাবে কাজ করেন। ১৯৮১ সালের এপ্রিল মাসে তিনি যোগদান করেন ‘শহীদুল্লাহ এন্ড এসোসিয়েট লিমিটেড’ এ৷ এখানেও জুনিয়র স্থপতি হিসেবে কাজ করেন তিনি ৷ ‘ঢাকা মিউজিয়াম’, ‘জাতীয় স্মৃতিসৌধ’ সহ আরো অনেক কাজের নকশা বাস্তবায়ন করে খ্যাতি অর্জন করেন তিনি। ১৯৭৬-৯৮ সালের মধ্যে বেশ কিছু বড় স্থাপত্যকর্ম করেছিলেন তিনি। এর মধ্যে রয়েছে কারওয়ান বাজারের আইআরডিবি ভবন, ভোকেশনাল টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ও ভোকেশনাল ট্রেনিং সেন্টার, চট্টগ্রাম ইপিজেড, ঢাকার অ্যাডভোকেট বার কাউন্সিল ইত্যাদি। মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মরণে ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর সাভারে স্মৃতিসৌধের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। নকশা আহ্বান করা হয় ১৯৭৮ সালে। মোট ৫৭টি নকশার মধ্যে থেকে সে সময়ের তরুণ স্থপতি সৈয়দ মঈনুল হোসেনের নকশাটি গৃহীত হয়। নির্মাণকাজ শেষ হয় ১৯৮৮ সালে। জাতীয় স্মৃতিসৌধের উদ্বোধন করা হয় ১৯৮২ সালের ১৬ ই ডিসেম্বর। তৎকালিন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এটির উদ্বোধন করেন। সে অনুষ্ঠানে এর স্থপতি সৈয়দ মঈনুল হোসেনকে দাওয়াত দেওয়া হয়নি। উদ্বোধনের পর সাধারণ জনতার মাঝে দাড়িয়ে তিনি সে অনুষ্ঠানে জাতীয় স্মৃতিসৌধ পর্যবেক্ষণ করেন । তিনি দেশের বড় বড় ৩৮ টি প্রতিষ্ঠানের নকশা করেন। তাঁর অসামান্য কৃতিত্বের কারণে একুশে পদক ও শেলটেক পদকে ভূষিত করা হয়। তিনি ২ সন্তানের জনক। সৈয়দা তাহরিন হোসেন ও সৈয়দা তানজিলা হোসেন। স্থপতি সৈয়দ মঈনুল হোসেন দীর্ঘ রোগভোগের পর ২০১৪ সালের ১০ নভেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর ২৩ বছর আগে বিবাহ বিচ্ছেদ হওয়ার পর থেকে তিনি স্বেচ্ছায় অন্তরীন হতে থাকেন। নিঃসঙ্গ জীবন যাপন করতে গিয়ে তিনি আস্তে আস্তে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। দীর্ঘদিন অন্তরীণ থাকায় অযত্নে অবহেলায় তিনি মৃত্যুমুখে পতিত হন। সে সময়কালে কেউ তার খোজ খবর রাখেন নি। গতকাল ১০ নভেম্বর, ছিল তার ৩য় মৃত্যুবার্ষিকী। কেউ হয়তো কোনভাবেও তাঁর কথা মনে রাখেনি। হয়তো এভাবেই দেশবাসী একদিন ভুলে যাবে মহান এই স্থপতিকে। সুত্র: ইন্টারনেট

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ