আনসার আল ইসলামের ৩ সদস্য গ্রেপ্তার

প্রকাশিত: ৯:০৯ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২৬, ২০২৩

আনসার আল ইসলামের ৩ সদস্য গ্রেপ্তার

নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের দাওয়াতি শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত মো. ইয়াকুব হোসাইনসহ তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। গতকাল বুধবার (২৫ অক্টোবর) রাতে নাশকতার পরিকল্পনাকালে ঝিনাইদহ সদর এলাকা থেকে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।

বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে র‍্যাব-৬ এর খুলনা সদর দপ্তরের সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি আরও জানান, গত রাতে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-৬ এর একটি আভিযানিক দল গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ঝিনাইদহ সদর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় নাশকতার পরিকল্পনাকালে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের দাওয়াতি শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত মো. ইয়াকুব হোসাইন ওরফে ইয়াকুব হুজুর (২১), মো. রুবেল ওরফে জাহাদ খান (৩৬) ও মো. মাহিনকে (১৮) গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় বিভিন্ন উগ্রবাদী বই, গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র, চাঁদা আদায়ের প্রমাণপত্র, মোবাইল ফোন ও সিম কার্ড।

র‌্যাব জানায়, গ্রেপ্তারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়- তারা নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সদস্য। তারা আফগানিস্তানে তালেবানের উত্থানে উদ্বুদ্ধ হয়ে আল কায়েদা মতাদর্শের জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের কার্যক্রম পরিচালনা করছিল। তারা বিভিন্ন সময় অনলাইনে বিভিন্ন উগ্রবাদী নেতাদের বক্তব্য দেখে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে সংগঠনের সদস্যদের মাধ্যমে ওই সংগঠনে যোগদান করেন। পরবর্তীতে তারা সংগঠনের সদস্য সংগ্রহে দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করছিল। পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন দেশে মুসলমানদের ওপর নির্যাতনসহ বিভিন্ন ধর্মীয় অপব্যাখ্যার মাধ্যমে ভুল বুঝিয়ে সংগঠনের সদস্যদের তথাকথিত জিহাদের মাধ্যমে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী করে তোলা হয়। এই উদ্দেশ্যে সংগঠনের সদস্যদেরকে তারা বিভিন্ন উগ্রবাদী বই, মুসলমানদের ওপর নির্যাতন ও উগ্রবাদী নেতাদের বক্তব্যের ভিডিও সরবরাহ করতো।

 

 

 

 

 

 

 

এছাড়াও তারা সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ভুল তথ্য দিয়ে তাদের আত্মীয়-স্বজন, বিভিন্ন মাদ্রাসা ও সদস্যদের নিকট থেকে নিয়মিত অর্থ সংগ্রহ করতো। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে তারা মসজিদ, বাসা বা বিভিন্ন স্থানে সদস্যদের নিয়ে গোপন সভা পরিচালনা করতো বলে জানা যায়। তারা বিভিন্ন অপব্যাখা ও মিথ্যা তথ্যের মাধ্যমে দেশের বিচার ও শাসন ব্যবস্থা সম্পর্কে বিতৃষ্ণা তৈরি করে ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করার জন্য সদস্যদেরকে উগ্রবাদী করে তুলতো। বর্তমানে সংগঠনটির সদস্যরা দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে সংগঠনের নাম সরাসরি উল্লেখ না করে সংঘবদ্ধ হচ্ছে।

জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, গ্রেপ্তারকৃত ইয়াকুব হোসাইন সংগঠনটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের দাওয়াতি শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন। ইয়াকুব জানান- আনসার আল ইসলামের এই সেলটি জুবায়ের নামক এক ব্যক্তির মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। যিনি বর্তমানে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি দেশে অবস্থান করছেন বলে জানা যায়। এছাড়াও সাদিক হুসাইন নামে এক ব্যক্তি সংগঠনটির অন্যতম অর্থ যোগানদাতা এবং বর্তমানে তিনি আফ্রিকার একটি দেশে অবস্থান করছেন বলে জানা যায়। এই সেলটির আরেক সদস্য ওমর ফারুক ওরফে রিয়াজ উদ্দিন নামক এক ব্যক্তি যিনি পার্শ্ববর্তী একটি দেশে অবস্থান করছেন বলে জানা যায়।

এই সেলের অন্যান্য সদস্যরা ঢাকা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করছে। তারা বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় (স্পর্শকাতর এলাকা) টার্গেট কিলিংয়ের জন্য প্রশিক্ষণের আয়োজনসহ অস্ত্র সংগ্রহের কাজ করতো এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ বজায় রাখতো। মূলত এই সেলের সদস্যরা অল্প বয়সী তরুণদের রিক্রুট করে দেশে নাশকতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। অতঃপর তাদেরকে অনলাইন প্ল্যাটফর্মের বিভিন্ন গ্রুপে যুক্ত করে দেশ ও দেশের বাহিরে থাকা সমমনা ব্যক্তিদের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দিত। তারা পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন দেশের সমমনা ব্যক্তিদের সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিয়মিত যোগাযোগ বজায় রাখতো এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন উগ্রবাদী গ্রুপে তাদের বিচরণ ছিল বলে জানা যায়।

এছাড়াও তারা সংগঠনের সদস্যদের একত্রিত করে বিভিন্ন প্রশিক্ষণের জন্য পার্শ্ববর্তী দেশে পাঠানোর পরিকল্পনা করছিল বলে গ্রেপ্তারকৃতরা জানান। সম্প্রতি র‌্যাবের অভিযানে এই সেলের খুলনা, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর ও রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা হতে ২৫ জনের অধিক সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানায় র‌্যাব।