ঢাকা ২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৩শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৯:৫৮ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ২৬, ২০২০
নয়ন খন্দকার, কালীগঞ্জ
পুকুরে গলদা চিংড়ি চাষ! তাও আবার মিঠা পানিতে! পুকুর পাড়ে ধীরে ধীরে উৎসুক জনতার ভিড় বাড়তে থাকে। জেলেরা জাল টেনে পুকুরের কিনারায় আসতেই সবাই অবাক! গলদা চিংড়ি! সাইজেও অনেক বড়। সবার মাঝে শোরগোল পড়ে যায়। শনিবার সকালে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার সুন্দরপুর-দূর্গাপুর ইউনিয়নের মহাদেবপুর গ্রামে সোহাগ মৎস খামারে গলদা চিংড়ি ধরাকে কেন্দ্র করে এমনই এক উৎসব মুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল। মাছ দেখতে ও কিনতে স্থানীয় লোকজনের পাশাপাশি শহর থেকেও লোকজন এসেছিল। সেদিন খামার থেকেই প্রায় ৫০ হাজার টাকার মাছ বিক্রি হয়ে যায়। উল্লেখ্য জেলায় এই প্রথম গলদা চিংড়ির চাষ হয়েছে।
সোহাগ মৎস খামারের ৬৬ শতাংশ জলকরে গলদা চিংড়ি ও কার্প জাতীয় মাছ চাষ করে মাত্র ৭ মাসেই অভাবনীয় সফলতার আশা করছেন মৎস চাষী সোহাগ। স্থানীয় লোকজনের চাওয়া পূরণ করতে গত শনিবার জাল টেনে অল্প পরিমাণে গলদা চিংড়ি, রুই-কাতলা ও সিলভার কার্প ধরা হয়। মাছগুলো আশানুরুপ বৃদ্ধি পেয়েছে। উপযুক্ত দাম পেলে প্রায় ৩ লাখ টাকা আয় হবে বলে ধারনা করছেন মৎস চাষী কৃষিবিদ সোহাগ কুমার বিশ্বাস।
সোহাগ কুমার বিশ্বাস জানান, তার বাবা স্বপন কুমার বিশ্বাস ৪ বছর ধরে পুকুরে কার্প জাতীয় মাছ চাষ করে আসছিলেন। সেই সূত্রে নিজেকে একজন সফল মৎস উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখতেন। স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষে ঢাকা আই ইউ বি এ টি থেকে কৃষিতে অনার্স শেষ করলেও ইন্টার্ন করেন মৎস চাষের উপর । ২০১৮ সালে মংলায় গাজী ফিস ফার্ম থেকে সফলতার সাথে ইন্টার্ন শেষে গ্রামে ফিরে এসে বাবার সাথে মাছ চাষ শুরু করেন। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরন করে তিনি পাবদা ও গুলশা মাছের চাষ করেন। কার্প জাতীয় মাছের তুলনায় এ জাতীয় মাছ চাষে অধিক মুনাফাও পেয়েছেন। এবছর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সাইদুর রহমান রেজার পরামর্শে ৬৬ শতাংশ জলকরে গলদা চিংড়ির সাথে রুই-কাতলা ও সিলভারকার্প মাছের চাষ করেন।
সোহাগ জানান, এ বছরের ফেব্রুয়ারী মাসের শেষের দিকে ৬৬ শতাংশের একটি পুকুরে বাগেরহাটের একটি মৎস খামার থেকে পি এল সাইজের (১০০টিতে কেজি) ৩২’শ পিছ গলদা চিংড়ি এবং ৩ হাজার পিছ কার্প জাতীয় মাছ ছাড়া হয়। প্রতিটি গলদা চিংড়ি ১৮ টাকা দরে কেনা হয়। সোহাগ বলেন, পুকুর প্রস্তুতকরণ, মাছের খাবার, প্রোবায়োটিক ও শ্রমিক খরচ বাবদ ৭ মাসে তার প্রায় ৩ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। সময় মতো খাবার ও সঠিক পরিচর্যা করায় মাছের ওজনও ভালো এসেছে। ৬৬শতাংশ এই পুকুর থেকে সাড়ে ৩’শ কেজি চিংড়ি ও ১হাজার কেজি কার্প জাতীয় মাছ পাবেন বলে আশা করছেন। সব ঠিকঠাক থাকলে চিংড়ি থেকে কমপক্ষে ৩লাখ টাকা ও কার্প জাতীয় মাছ থেকে আরও ৩লাখ টাকার মাছ বিক্রি করা যাবে। সব মিলিয়ে খরচ বাদে কমপক্ষে ৩লাখ টাকা নীট মুনাফা পাবেন বলে তিনি ধারনা করছেন।
খাবার ব্যবস্থাপনা নিয়ে কথা হলে সোহাগ জানান, তিনি প্রতিদিন সকাল ১০টা ও সন্ধ্যা ৭টায় চিংড়ির ফিড ও বিকাল ৪টার সময় ভাসমান ফিড দিতেন। মাছের ওজন অনুযায়ী খাবার দিতে হয়। প্রতি ১’শ কেজি মাছের ওজনে দিনে ৩ থেকে ৪ কেজি ফিড দিতে হয়।
এছাড়া অক্সিজেনের স্বল্পতা দেখা দিলে এ্যারেটর ব্যবহার করে অক্সিজেনের যোগান দিতে হয়। গলদা চিংড়িতে তেমন কোন রোগবালাই দেখা যায়নি বলে তিনি জানান।
মাছের বাজারজাত করণ নিয়ে তিনি বলেন, স্থানীয় ভাবে গলদা চিংড়ির বাজার ওইভাবে গড়ে উঠেনি। তাই তার মৎস খামারে উৎপাদিত গলদা চিংড়ি বিক্রির জন্য সাতক্ষীরা চুকনগরে এক মৎসব্যবসায়ীল সাথে যোগাযোগ হয়েছে। তিনি প্রতি কেজি চিংড়ি ১হাজার থেকে ১২’শ টাকা দর দিতে চেয়েছেন। অল্প কয়েকদিনের মধ্যে সব মাছ ধরা হবে। রুই-কাতলা ও সিলভার কার্প মাছ স্থানীয় বাজারে বিক্রি করা হবে। চিংড়ি সাতক্ষীরাতে পাঠানো হবে।
উপজেলা সিনিয়র মৎস কর্মকর্তা সাইদুর রহমান রেজা জানান, কালীগঞ্জের মাটি, পানি ও আবহাওয়া গলদা চিংড়ি চাষের উপযোগি। গলদা চিংড়ি চাষ লাভজনক হওয়ায় উপজেলার মৎস চাষীদের চিংড়ি চাষে উদ্বুদ্ধ করছেন। কেউ চিংড়ি চাষে এগিয়ে আসলে উপজেলা মৎস অফিস তাদেরকে সার্বিক সহযোগিতা করবে বলে তিনি জানান।
Design and developed by zahidit.com