ভুট্টায় দোল খাচ্ছে কৃষকের হাসি

প্রকাশিত: ৫:২৯ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২০

ভুট্টায় দোল খাচ্ছে কৃষকের হাসি

নয়ন খন্দকার, কালীগঞ্জ॥
দাম ভাল, রোগ বালাইয়ের ঝুঁকি ও সেচ কম লাগার কারনে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে দিন দিন ভুট্টা আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। চলতি বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৮২৫ হেক্টর জমিতে ভুট্রার আবাদ বেশি হয়েছে। এছাড়া কৃষকদের কৃষি ভর্তুকি বা প্রণোদনা দেওয়ার কারনে ভুট্রার প্রতি ঝুঁকেছেন এ উপজেলার কৃষকরা। মাঠের পর মাঠ সবুজ পাতার আঁড়ালে হাসছে হলুদ রঙের ভুট্টা। মাথায় লাল ফুল ও গায়ে হলুদ বর্ণের এসব ভুট্টা বাতাসে দোল খাচ্ছে। বাতাসে দোল খাওয়ার সাথে চাষীদের মুখে ফুটেছে লাভের স্বপ্নের হাসি।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানাগেছে, চলতি বছর ১৫শ হেক্টর জমিতে ভুট্টা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। সেখানে ১৩ হাজার ২শ কৃষক ২৩২৫ হেক্টর জমিতে ভ্ট্টুার আবাদ করেছেন। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে চলতি বছর ৮২৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ বেশি হয়েছে।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উন্নয়ন শাখায় কর্মরত উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ বিশ্বাস জানান, ভুট্টা আবাদ বৃদ্ধির জন্য কৃষি বিভাগ কৃষকদের সার্বিকভাবে সহযোগিতা করছে। এছাড়া চলতি বছর সরকার কালীগঞ্জ উপজেলার ৮০০ জন চাষীকে প্রণোদনা ও ৬৪ জন চাষীকে প্রদর্শণী প্লট করার জন্য সহযোগিতা করেছেন। ৮০০ জন চাষীর প্রত্যককে ২ কেজি করে ভুট্টার বীজ, ২০ কেজি ডিএপি ( ড্যাপ সার) ও ১০ কেজি এমওপি ( পটাশ) সার বিনামূল্যে দিয়েছেন। এছাড়া রাজস্ব খাত থেকে ৬০ জন ও এনএটিপি (ন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল টেকনোলজি প্রোজেক্ট) প্রকল্পের আওতায় ৪ জনসহ মোট ৬৪ জন কৃষককে ভ্ট্টুার উপর প্রদর্শণী প্লট দেওয়া হয়েছে। এসব কৃষকের প্রত্যককে নগদ ১৫শ টাকাসহ সার, কীটনাশক, সাইনবোর্ড বিনামূল্যে দেয়া হয়েছে।

উপজেলা কৃষি অফিসের পরিসংখ্যান অনুযায়ি ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ২৩২৫ হেক্টর, ২০১৮-১৯ অর্থ বছেরে ১৪৫০ হেক্টর, ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ৩৫০ হেক্টর, ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ১১০ হেক্টর, ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে ১৩৫ হেক্টর ও ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে ১০৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছে। কৃষি বিভাগের বিগত ৬ বছরের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, এ উপজেলায় দিন দিন ভুট্টার আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কৃষি বিভাগের দেওয়া তথ্য মতে কালীগঞ্জ উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা, নিয়ামতপুর, ত্রিলোচনপুর, হাসানহাটি, তিল্লা, ঈশ্বরবাসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের কৃষকরা ভুট্টার আবাদ বেশি করেছেন।

উপজেলার ঈশ্বরবা গ্রামের কৃষক জয়নাল আবেদীন জানান, ধানের চেয়ে ভুট্টায় লাভ বেশি। তিনি ৩৩ শতকের ৩ বিঘা জমিতে ভুট্টার আবাদ করেছেন। এর মধ্যে কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় দেড় বিঘা জমিতে প্রদর্শণী প্লট ও বাকি দেড় বিঘা জমিতে নিজে চাষ করেছেন। গত বছর তিনি বিঘা প্রতি জমিতে গড় ৪৫ মণ করে ভুট্টা পেয়েছিলেন এবং ৩শ মণ ভুট্টা বিক্রি করেছিলেন। তিনি আরো জানান, সার, বীজ,কীটনাশক, পরিচর্যা সেচসহ বিঘা প্রতি প্রায় ১০/১১ হাজার টাকা উৎপাদন খবর ব্যয় হয়। চলতি বছরও ভাল ভুট্টার আবাদ পাবেন বলেও তিনি আশা করেন।

একই গ্রামের কৃষক তারিকুল ইসলাম জানান, তিনি ৩৩ শতকের দুই বিঘা জমিতে ভুট্টার আবাদ করেছেন। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে তিনি নগদ ১৫০০ টাকাসহ সার, বীজ কীটনাশক পেয়েছেন।
তিনি আরো জানান, ভুট্রা আবাদ করতে সেচ সার, বীজ, পরিচর্যা ও কীটনাশকসহ বিঘা প্রতি অনুমানিক ১১/১২ হাজার টাকা খবর হয়। ভ্ট্টুা ভাল হলে প্রতি বিঘায় ৪০ থেকে ৫০ মণ ভুট্রার ফলন পাওয়া যায়।
বাজারে গত বছর কাঁচা ভুট্রার মণ ৪৫০ টাকা ও শুকনা ভুট্রার মণ ৭৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। ফলন ভাল হলে খরচ খরচা বাদে অর্ধেক লাভ হবে বলে তিনি আশা করেন। তবে তিনি কৃষি বিভাগ থেকে প্রণোদনা পাওয়ায় তার খরচ একটু কম হয়েছে। এজন্য অন্য কৃষকের চেয়ে তিনি একটু লাভও বেশি পাবেন। তিনি আরো জানান, একই এলাকার জয়নাল আবেদীন, আকিদুল, ঠান্ডু, হাফিজুর, রফিকসহ বেশ কয়েকজন চাষী ভুট্রার আবাদ করেছেন।

উপ সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মতিয়ার রহমান জানান, উৎপাদন খরচের চেয়ে লাভ বেশি হওয়ায় বিগত অন্য বছরের তুলনায় কালীগঞ্জ উপজেলায় এবার সবচেয়ে বেশি ভুট্টার আবাদ হয়েছে। তাছাড়া ভুট্টা মানুষের জন্য পুষ্টিকর খাবার। এছাড়া এখন ভুট্টা পল্ট্রি ও মাছের খাবারসহ বিভিন্ন খাবারে যুক্ত হয়েছে। আমরা কৃষি বিভাগ থেকে ভুট্টা চাষিদের সার্বিকভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছি।

উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ জাহিদুল করিম বলেন, ভুট্টা চাষে ঝুঁকি কম আবার লাভও ভাল। যার কারনে আগের থেকে ভুট্টা চাষে চাষীদের মধ্যে আগ্রহ বেড়েছে। এছাড়া কৃষকদের ভুট্রা আবাদ করার জন্য সার, বীজ, কীটনাশক ও নগদ টাকা প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। ভুট্টা আবাদে সেচ খরচ কম লাগে। এছাড়া ভুট্টায় তেমন কোন রোগ বালাই নেই।
উপজেলা কৃষি বিভাগ ভুট্টা চাষীদের ক্ষেত পরিদর্শন, কৃষি পরামর্শসহ তাদের নানাভাবে সহযোগিতা করছেন। যার কারনে কালীগঞ্জে দিন দিন ভুট্টার আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি আরো উল্লেখ করেন, উপজেলার কোথাও কোন ভুট্টা ক্ষেতে এখনো পোকার আক্রমনের কথা শুনা যায়নি। তবে বেশ কিছু জেলায় “আর্মি ওয়ার্ম” নামের এক ধরণের পোকার আক্রমনের কথা শুনে যাচ্ছে। আশা করি চলতি বছর এ উপজেলার ভুট্টার বাম্পার ফলন হবে।