মহেশপুরের পল্লীতে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছেন এমকে টুটুলের মাতৃভাষা গণগ্রন্থাগার

প্রকাশিত: ৯:৪৮ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ১৬, ২০১৯

মহেশপুরের পল্লীতে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছেন এমকে টুটুলের মাতৃভাষা গণগ্রন্থাগার

ফয়সাল আহমেদ-
উচ্চ শিক্ষা শেষে চাকুরী না করে কৃষিকাজের পাশাপাশি সমাজ উন্নয়নে ভুমিকা রেখে চলেছে ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার সীমন্তবর্তী গ্রাম কালুহুদা গ্রামের যুবক এম কে টুটুল। অজপাড়া গায়ে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছেন তার প্রতিষ্ঠিত মাতৃভাষা গণগ্রন্থাগার। লাইব্রেরীর কল্যানে গ্রামে মানুষ এখন বই পড়তে পারছেন। সেই সাথে চোঁখ বোলাতে পারছেন দৈনিক পত্রিকার পাতায়।


জানা যায়, ১৯৯৫ সালে ৮ম শ্রেণী অধ্যায়নরত অবস্থায় মারা যায় টুটুলের পিতা মিজানুর রহমান। বিধবা মায়ের অস্বচ্ছল সংসারে থেকেই কোনমত লেখাপড়া করতে হয়েছে তার। এসএসসি পাশ করে শুরু করেন টিউশনি। বিধবা মায়ের সাথে পিতার রেখে যাওয়া একখন্ড জমিতে চাষ শুরু করেন। সেই থেকে নিজের খরচে লেখাপড়া শেষ করেছেন তিনি। যশোর এমএম কলেজ থেকে শেষ করেন ডিগ্রি কোর্স। এখন কৃষি কাজের পাশা-পাশি লাইব্রেরী চালানো তার নেশা। এখন যেখানে প্রতিদিন আসে গ্রামের শিক্ষার্থীসহ নানা বয়সী মানুষ। পড়তে পারেন পাঠ্যপুস্তকসহ বিভিন্ন লেখকের বই।
টুটুল জানান, ২০০০ সালের আকস্মিক বন্যায় মহেশপুর এলাকায় ব্যাপক ফসলহানি ঘটে। এলাকার দরিদ্র পিতামাতা তাদের সন্তানদের নতুন বইখাতা কিনে দিতে পারছিল না। সেখান থেকে মাথায় লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠা করার। এরপর নিজের বাড়ির এক কোণে টিন-বাঁশের ঘর তৈরী করি। ৫০টি বই নিয়ে লাইব্রেরির যাত্রা শুরু করি। এখন বইয়ের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৬ হাজার। পাঠ্যপুস্তক, কৃষি, মুক্তিযুদ্ধ বিষযক বই-মুক্তিযুদ্ধের উপর নির্মিত চলচ্চিত্র ও প্রামান্য চিত্র, গল্প-উপন্যাস, কবিতা-প্রবন্ধসহ সাহিত্যের ও সব ধরণের বই আছে এ লাইব্রেরীতে।


তিনি বলেন, জ্ঞান আলোকে মানুষকে উদ্ভাসিত আর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বর্তমান প্রজন্মের সামনে তুলে ধরার লক্ষ্যেই এই লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠা করা।
লাইব্রেরীতে বই পড়তে আসা ওই গ্রামের ৬ষ্ট শ্রেনীর ছাত্র রুবেল বলেন, স্কুল থেকে বাড়ি এসে বিকেলে এই লাইব্রেরীতে বই পড়তে আসি। অনেক বই এখানে পাওয়া যায়। যে কারণে আমাদের বই কিনতে হয় না।
গ্রামের নজরুল ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, টুটুলের লাইব্রেরীতে বেশ কয়েকটি দৈনিক পত্রিকা পাওয়া যায়। যা পড়তে হলে আমাদের উপজেলা শহরে যেতে হতো। টুটুল শুধু লাইব্রেরীই করেননি। তিনি মাদক, সন্ত্রাস, বাল্যবিয়ে বন্ধের জন্য বিভিন্ন স্থানে সভা সমাবেশ করেন।
এ ব্যাপারে ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ বলেন, বাংলার আনাচে কানাচে প্রত্যন্ত অঞ্চলে আলোকিত মানুষ জন্ম নিয়েছে এবং তারা প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে। তেমনি একজন হচ্ছে এম কে টুটুল। ওনার যে লাইব্রেরী আছে তার জন্য অনেক অবকাঠামো দরকার। টুটুলের লাইব্রেরীর অবকাঠামোর জন্য আমরা সাহায্য করেছি। ভবিষ্যতে আরও সহযোগিতা করা হবে। মহেশপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষ যেন আরও সচেতন ও আলোকিত হয়ে ওঠে এ প্রত্যাশা আমাদের।