ঢাকা ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৩:০১ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৬, ২০১৭
২৮ আগস্ট দুপুর ১২টা। তখনো বিদ্যালয়ের ক্লাস চলছে। এদিকে বিদ্যালয় মাঠে জড়ো করা হচ্ছে গরু-ছাগল। বেলা একটা বাজার সঙ্গে সঙ্গে ছুটির ঘণ্টা বাজানো হয়। শত শত শিক্ষার্থী গরু-ছাগলের ভিড় ঠেলে বিদ্যালয়ের মাঠ পার হয়। এই অবস্থা ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার গাজিরহাট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠের।
এই মাঠে অন্তত ৫০ বছর ধরে প্রতি সোমবার গরু-ছাগলের হাট বসে। হাটবারে বিদ্যালয়ে পাঠদান ব্যাহত হয়। এ কারণে এই দিন ক্লাস হয় আধা বেলা। খেলার মাঠটি গোবর আর কাদায় ভরে থাকে। শিক্ষার্থীরা সেখানে খেলাধুলা করতে পারে না।
বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা বলেন, ১৯৬১ সালে ১ একর ৭৫ শতক জমির ওপর বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়। বর্তমানে ১৬ জন শিক্ষক, ৩ জন কর্মচারী ও ১ জন গ্রন্থাগারিক রয়েছেন। শিক্ষার্থী আছে অন্তত ৭০০। ৪টি ভবনে ১৩টি শ্রেণিকক্ষ, ২টি অফিসকক্ষ ও ছাত্রীদের জন্য একটি কমনরুম রয়েছে। প্রতি সোমবার সকাল ১০টা থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত পাঠদান চলে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, গাজিরবাজারকে ঘিরে গাজিরহাট মাধ্যমিক বিদ্যালয়। প্রথম দিকে বাজার থেকে অনেক পয়সা বিদ্যালয়কে দেওয়া হতো। যে কারণে বিদ্যালয়ের মাঠে গরু-ছাগলের হাট বসানোর অনুমতি দেয় পরিচালনা কমিটি, যা আজও চলছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, বিদ্যালয়ের সামনে খেলার মাঠে এই গরু-ছাগলের হাট বসানোয় বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হয়। তা ছাড়া বর্ষা মৌসুমে মাঠে সারাক্ষণ কাদা জমে থাকে। শিক্ষার্থীরা সেখানে খেলাধুলা করতে পারে না। এমনকি তারা মাঠ দিয়ে চলাচলও করতে পারে না। এ অঞ্চলে এটিই একমাত্র খেলার মাঠ। সেখানে বিকেলে খেলাধুলার আসর বসত। কিন্তু গরুর হাটের কারণে বছরের অর্ধেক সময় মাঠটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে থাকে। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি হাটের ইজারাদার হওয়ায় কেউ কোনো প্রতিবাদও করতে সাহস পান না। সরকার প্রতিবছর এই হাট থেকে ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা রাজস্ব পায়। হাটটি এবারও ২৯ লাখ টাকায় ইজারা নেওয়া হয়েছে। তারপরও বিদ্যালয়ের মাঠ থেকে হাটটি সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে না।
বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র মোজাহিদ বলে, সোমবার তাদের অর্ধেক ক্লাস হয়।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জালাল উদ্দিন বলেন, হাটটি অনেক দিন থেকেই বসছে। এতে কিছুটা সমস্যা হলেও এলাকার মানুষের স্বার্থে তাঁরা হাট বসানোর অনুমতি দেন। এই হাট থেকে তাঁরা বছরে ৩০ হাজার টাকা পান, যা বিদ্যালয়ের ছোট ছোট উন্নয়নমূলক কাজে ব্যয় করা হয়।
হাটের ইজারাদার ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি সাগর বিশ্বাস বলেন, এই হাট অনেক পুরোনো। এই হাটের টাকায় একসময় বিদ্যালয় চলেছে। এখনো তাঁরা ভালো টাকা হাট থেকে পান। তবে এ কথা ঠিক, বিদ্যালয়ের মাঠে গরু-ছাগলের হাট বসলে শিক্ষার পরিবেশ কিছুটা নষ্ট হয়। দ্রুত হাটটি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে তাঁরা কাজ করছেন।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শেখ মো. কামরুজ্জামান বলেন, বিদ্যালয়ের মাঠে হাট বসানোর বিষয়টি তাঁর জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখবেন। তিনি বলেন, হাটের কারণে আধা বেলা ক্লাস নিয়ে বিদ্যালয় ছুটি দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটা কেন করা হচ্ছে, তারও খোঁজ নেবেন।
Design and developed by zahidit.com