ঢাকা ২৮শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৩ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৬শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ১১:৫৮ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২৯, ২০১৮
ঝিনাইদহ সংবাদ ডেস্ক :
ঝিনাইদহে মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে শিশু শিক্ষার উন্নয়নে নেই কোন অগ্রগতি। অধিকাংশ বিদ্যালয়েই নেয়া হয় না ক্লাস। আলমারিতেই আবদ্ধ থাকে ল্যাপটপ, প্রজেক্টর, প্রজেক্টর স্কিন। শিক্ষা কর্মকর্তাদের তদারকির অভাব ও শিক্ষকদের দায় সারা মনোভাব প্রধান কারন বলছেন সয়ং জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা।
কালীগঞ্জ উপজেলার আগমুন্দিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২০১৬ সালে ল্যাপটপ, প্রজেক্টর, স্কিন দেওয়া হলেও সেখানেই সীমাবদ্ধ সব কার্যক্রম। একদিনও হয়নি মাল্টিমিডিয়া ক্লাস বলেন সয়ং বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা।
এমন চিত্র প্রায় সব সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। শিক্ষকরা ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড ও ল্যাপটপে কনটেইন্ট তৈরি করে প্রজেক্টরের মাধ্যমে ছবি সহ শিক্ষার্থীদের পাঠদান করবে। এতে শিশুদের আগ্রহ বাড়বে, ঘটবে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন।
এই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে সরকার প্রাইমারী এ্যাডুকেশন ডেভোলপমেন্ট প্রোগ্রাম (পিইডিপি-৩) এর আওতায় ঝিনাইদহ জেলায় ৭৭৭ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ল্যাপটপ ও ৩১০ টি বিদ্যালয়ে প্রজেক্টর, প্রজেক্টর স্কিন প্রদান করে।
মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে পাঠদান করার কথা ৩১০ টি বিদ্যালয়ে। কিন্তু এর মধ্যে ৫০ ভাগ বিদ্যালয়ে একেবারেই হয় না মাল্টিমিডিয়া ক্লাস। ৩০ ভাগ বিদ্যালয়ে শুধুমাত্র শিশু শ্রেণীতেই মাঝে মধ্যে দু-একটি ক্লাসে সীমাবদ্ধ থাকে। শহর কেন্দ্রীক ২০ ভাগ বিদ্যালয়ে অনিয়মিত ভাবে অন্যান্য শ্রেণীতে দু-একটি ক্লাস হয়।
অধিকাংশ বিদ্যালয়ে আলমারীতে ব্যাগে বন্দি করে রাখা হয়েছে প্রজেক্টর। স্কিন চাপা পড়ে থাকে ফাইলপত্রের নিচে। আর ল্যাপটপ শিক্ষা দানের বদলে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করছে শিক্ষকরা। ক্যামেরা দেখে দ্রুততার সাথে তা বের করতেও দেখা যায় অনেক স্কুলে।
শিক্ষার্থীরা জানান, স্যাররা মাল্টিমিডিয়া ক্লাস নেয় না। যদি ছবিতে দেখে দেখে আমরা পড়তে পারতাম তাহলে পড়া বুঝতে আমাদের অনেক সুবিধা হত। ফলে পরীক্ষায় ভাল করতে পারতাম।
অন্যদিকে বিদ্যালয়ে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম থাকলেও ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই জানেন না কি মাল্টিমিডিয়া ক্লাস।
কালীগঞ্জ উপজেলার আগমুন্দিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মনিরা পারভীন বলেন, আমরা ২০১৬ সালে মাল্টিমিডিয়া ল্যাপটপ, প্রজেক্টর পেয়েছিলাম। কিন্তু আজ অবধি কোন ক্লাস নিতে পারি নাই। কারন এক জন প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত শিক্ষক ছিল তাও ২০১৬ সালের আগেই বদলি হয়ে অন্যত্র চলে গেছে। মাল্টিমিডিয়া ক্লাস না হলে শিশুরা তো কিছু বঞ্চিত হয়ই, তবুও শিক্ষক না থাকলেতো আর ক্লাস নেওয়া কোনভাবেই সম্ভব না।
তবে কোন কোন বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অভিযোগ করে বলেন, শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে আমাদের যে ১২ দিনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় তা মাল্টিমিডিয়া ক্লাসের জন্য যথেষ্ট নয়। ফলে নিয়মিত ক্লাস নেওয়া যায়না। যদি একটু বেশী সময় প্রশিক্ষন দিত তাহলে নিয়মিত ভালভাবে ক্লাস নিতে পারতাম। অন্যদিকে কিছু কিছু সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ল্যাপটপ, প্রজেক্টর নষ্ট, ভাঙাচুরা ভবন, বিদ্যুৎ না থাকাও মাল্টিমিডিয়া ক্লাস না হওয়ার অন্যতম কারন বলেন শিক্ষকরা।
অবসরপ্রাপ্ত কলেজ শিক্ষক আমিনুর রহমান টুকু জানান, প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষার মান উন্নয়নে সরকার যে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসের ব্যবস্থা করেছে এটা নিতান্তই ভাল দিক। কেননা শিশুরা যেটা দেখবে সেটা তারা খুব দ্রুত আত্নস্থ করতে পারবে এবং এটাই হয়ে থাকে। কাজেই মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে ক্লাস নেওয়া হলে শিশুরা দেখে দেখে ভাল করে শিখতে পারে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় মাল্টিমিডিয়া ক্লাসের প্রয়োজনীয় সকল সুযোগ সুবিধা থাকার পরও ক্লাস নেওয়া হয় না। আমি মনে করি সংশ্লিষ্ট স্কুলের প্রধান শিক্ষকরা যদি আন্তরিক হন, তাহলে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসের কাজটা অনেকাংশেই এগিয়ে যাবে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শেখ মো: আক্তারুজ্জামান জানান, ক্লাস্টারের দায়িত্বে থাকা শিক্ষা অফিসারের তদারকি ঠিক মত হচ্ছে না। আবার নিজের দোষ অন্যের ঘাড়ে চাপাতেই নানা অজুহাত দেখাচ্ছে শিক্ষকরা। তবে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস নেওয়ার ক্ষেত্রে যে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে তা দ্রুত সমাধানের উদ্দোগ নেওয়া হয়েছে। শিক্ষা অফিসারদের প্রতিনিয়ত স্কুল পরিদর্শনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যাতে করে ঠিকমত মাল্টিমিডিয়া ক্লাস হয়।
শিক্ষা নীতিমালা অনুসারে শিশু শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত প্রতিদিন পর্যায়ক্রমে একটি করে ক্লাস নিতে হবে মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে। তবে সরকারের শিক্ষা ব্যবস্থা ডিজিটালাইজেশনের ক্ষেত্রে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস না হওয়া একাট বড় প্রতিবন্ধকতা বলছে সচেতন মহল।
।(প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভাল, মন্দ- পর্ব – ২, আগামীকাল ৩ য় পর্ব)।
Design and developed by zahidit.com