ঢাকা ২৬শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৪শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৬:০৫ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৮, ২০১৮
বাবা মারা যান জন্মের পর। মা-ও পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন ছয় বছর আগে। তখন তিনবেলা খাবার জুটত না ফেরদৌসীর (১৭)। সে গৃহপরিচারিকার কাজ নেয়। কিন্তু লেখাপড়া বাদ দেয়নি।
ফেরদৌসী খাতুন এখন ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর পৌর মহিলা ডিগ্রি কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। সে শহরের মুদিদোকানে কর্মচারীর কাজ নিয়েছে। সেখান থেকে মাসে তিন হাজার টাকা বেতন পায়। তাই দিয়ে জীবন চালানোর পাশাপাশি পড়ালেখার খরচ চালিয়ে যাচ্ছে।
ফেরদৌসী কোটচাঁদপুর উপজেলার কুশনা গ্রামের মৃত হোসেন আলীর কন্যা। তার বড় এক বোন আছেন। তবে তার জন্মের আগেই বোনের বিয়ে হয়ে যায়। ফেরদৌসীর জন্মের পর তার বাবা হোসেন আলী মারা যান। এরপর মা শাহিদা বেগমের আয়ে চলছিল সংসার। মা অন্যের বাড়িতে কাজ করতেন আর মেয়েকে পড়ালেখা করাতেন। ফেরদৌসীও মাঝেমধ্যে কাজে যেত।
ফেরদৌসী বলে, সে যখন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে, তখন ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে তার মা মারা যান। এতে একদম ভেঙে পড়েছিল সে। কী করবে ভেবে পাচ্ছিল না। কিন্তু ধীরে ধীরে নিজেকে সামলে নেয়। অন্যের বাড়িতে কাজ শুরু করে। সকালে কাজে চলে যেত। নয়টার মধ্যে বাড়ি ফিরে আসত, তারপর স্কুলে যেত। এভাবে পড়ালেখা চলছিল। কিন্তু গ্রামে ঠিকমতো কাজ না পাওয়ায় কুশনা মাধ্যমিক বিদ্যালয় ছেড়ে চলে আসে শহরে। কোটচাঁদপুর শহরের একটি ডেন্টাল ক্লিনিকে অভ্যর্থনাকারীর চাকরি নেয়, পাশাপাশি কোটচাঁদপুর বালিকা বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। ২০১৭ সালে এই বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ-৪.২৭ পেয়ে পাস করেছে।
ফেরদৌসী আরও বলে, কোটচাঁদপুর পৌর বালিকা ডিগ্রি কলেজে এইচএসসিতে ভর্তি হয়। ওঠে শহরের একটি ছাত্রী মেসে। তখন সে ছেলেদের একটি মেসে রান্নার কাজ করত। এরপর ডিসেম্বরে একটি মুদিদোকানে কর্মচারীর কাজ নিয়েছে। কাজের কারণে কলেজে ক্লাস করার সময় হয় না তার। এ কারণে প্রাইভেট পড়ে। তার আশা, পড়ালেখা করে ভালো চাকরি পাবে।
ফেরদৌসী বলে, অনেক কষ্ট করে সে এত দূর আসতে পেরেছে। এতে তার শিক্ষকদের অবদানও কম নয়। এসএসসি পরীক্ষার আগে সে সাব্দার আলী আর নাসরিন সুলতানার কাছে প্রাইভেট পড়েছে। তাঁরা কখনো টাকা নেননি। এখন কলেজের শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম, মনিরুজ্জামান ও হাবিবুর রহমানের কাছে প্রাইভেট পড়ছে। তাঁরাও টাকা নেন না। কলেজে ভর্তির সময় অভিভাবকের ঘরে কার নাম লিখবে, ভেবে পাচ্ছিল না। শিক্ষক হাবিবুর নিজের নাম লিখে ভর্তির ব্যবস্থা করেন।
শিক্ষক হাবিবুর বলেন, একটু ভালোভাবে পড়ালেখা করতে পারলে ফেরদৌসী ভালো ফল করতে পারবে।
Design and developed by zahidit.com