বন বিভাগের টিপি বাণিজ্য প্রতি মাসে আদায় হচ্ছে ৬ লক্ষ টাকা !

প্রকাশিত: ১০:১৭ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ২১, ২০১৮

বন বিভাগের টিপি বাণিজ্য প্রতি মাসে আদায় হচ্ছে ৬ লক্ষ টাকা !

সুমন মালাকার, কোটচাঁদপুর (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি ঃ

ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে সম্পূর্ণ বিধি বহির্ভূতভাবে টিপি (ট্রন্সপোর্ট পাস) দিয়ে কাঠ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে দু’হাতে টাকা কামাচ্ছে স্থানীয় বনবিভাগ। তাদের নিয়োগকৃত প্রভাবশালী এক দালালের মাধ্যমে এ টাকা আদায় করা হচ্ছে। দালালের কাজ হচ্ছে সকাল থেকে রাত অবধি উপজেলার দু’ডজন স-মিল এলাকায় ঘুরে ঘুরে কোথায় কত গাড়ি কাঠ চালান হচ্ছে সে হিসাব রাখা। বিনিময়ে সে গাড়ি প্রতি পায় দু’শত টাকা। বন বিভাগে বিভিন্ন সময়ে দায়িত্বে থাকা চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী লোহার সিল সম্বলীত বন বিভাগের অফিসিয়াল ছাঁপ মেরে প্রতি গাড়িতে তিনি নেন এক’শ টাকা। ১৫শ টাকা রাখা হয় ফরেষ্টার, রেঞ্জার, জেলা কর্মকর্তা ও বিভাগীয় বন কর্মকর্তা, যশোর এর জন্য।

এদিকে গত মাসের প্রথম থেকে শুরু হয় মহাসড়কে পরিবহনের ওজন নিয়ন্ত্রণ স্কেল। স্কেল চালু হওয়ার আগে প্রতি ট্রাকে গোল গাছ যেত ৪’শ থেকে ৪২৫ ঘন ফুট। সাইজ কাঠ যেত ৬৫০ থেকে ৭৫০ ঘন ফুট। বর্তমানে ওজন নিয়ন্ত্রণের কারণে ট্রাকে পরিবহন ক্ষমতা অর্ধেকে নেমে এসেছে। এখন গোল গাছ ২৫০ থেকে ২৭০ ঘনফুট ও সাইজ কাঠ যাচ্ছে ৪৫০ থেকে ৪৮০ ঘনফুট।

এদিকে গাড়ি ভাড়া, লেবার এর দাম রয়েছে একই। যে কারণে ব্যবসায়ও নেমেছে ধস। অথচ বনবিভাগ কর্তৃপক্ষ পুরতান রেট অনুসারে প্রতি গাড়িতে টিপি খরচ আদায় করছেন ১৮শ টাকা হারে। আগের তুলনায় প্রতি গাড়িতে অর্ধেক মাল গেলেও বন বিভাগ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জোরজুলুম করেই গাড়ি প্রতি পূর্ব নির্ধারিত টাকাই আদায় করছেন। ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীরা বিষয়টি বিবেচনার জন্য বনবিভাগ কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করলেও কোন ফল হয়নি।

তথ্য অনুসন্ধ্যানে জানা যায়, সরকারি গাছ পাচার রোধে বন বিভাগে টিপি প্রথা রয়েছে। কিন্তু টিপি সনদ দিয়ে সরকারিভাবে টাকা নেওয়ার কোন বিধান নেই।

কোটচাঁদপুর বনবিভাগের অধীন রয়েছে পার্শ্ববর্তী মহেশপুর উপজেলা। এছাড়া কোটচাঁদপুরের নিকটবর্তী যশোরের চৌগাছা উপজেলায় বনবিভাগের টিপি দেওয়ার কোন ব্যবস্থা না থাকায় ওখানকার প্রায় শতভাগ ব্যবসায়ীরা কোটচাঁদপুর বন বিভাগ থেকে টিপি নিয়ে থাকেন। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে কোটচাঁদপুর-মহেশপুর ও চৌগাছা উপজেলা থেকে প্রতি দিন টিপি বাণিজ্য করে কমপক্ষে ২০ হাজার টাকা ও মাসে ৬ লক্ষাধিক টাকা আদায় করছে। যা বন খেকো কর্মকর্তাদের হচ্ছে পকেট ভর্তি। আদায়কৃত এই বিপুল পরিমান অর্থের একটি টাকাও সরকারি কোষাগারে জমা পড়ছে না।

এ ব্যাপারে কোটচাঁদপুর বনবিভাগে ফরেষ্টার আবুল বাশার প্রতি টিপিতে ১৮শ টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ডিএফও স্যারের নির্দেশেই এ টাকা আদায় করা হচ্ছে। তিনি বললে-আমরা বিনা পয়সায় টিপি করে দেব। তবে সেক্ষেত্রে ৭ থেকে ১০ দিন সময় লাগবে। রেঞ্জার খোন্দকার গিয়াস উদ্দীনের সাথে কথা বললে তিনি ঢাকায় বিভাগীয় অফিসে জরুরী মিটিং করার অযুহাত দেখিয়ে ফোন রেখে দেন।

বিষয়টি সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজনীন সুলতানাকে অবহিত করা হয়েছে। বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (যশোর), সরোয়ার আলম এর সাথে কথা বললে, তিনি জানান আমার নির্দেশেই টিপি দিয়ে টাকা আদায়ের কথা সত্য নয় এবং টিপি দিয়ে টাকা আদায়ের কোন বিধানও নেই। তবে বিষয়টি আমি দেখবো।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ