রাজধানীর ইডেন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সীমানা প্রাচীর ঘেঁষে নির্মিত নীলক্ষেতের সিটি করপোরেশন মার্কেটের সামনের রাস্তায় গত সোমবার রাতে মধ্যবয়সী এক ব্যক্তি পাকা কলা বিক্রি করছিলেন। একটু পরপর থেমে থেমে বলছিলেন, ‘নাইস বেনানা, প্রাইস ভেরি লেস,
অনলি টুয়েনটি টাকা টুয়েলভ পিস ফর টুডে।’ অনর্গল ইংরেজি ও বাংলা মিশ্রিত ভাষায় তিনি ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছিলেন। অপেক্ষাকৃত সস্তা দাম, পাশাপাশি বিক্রেতার মুখে ইংরেজি শুনে ক্রেতাদের ভিড় ক্রমেই বাড়ছিল।
মার্কেটের এক দোকানের কর্মচারী তাকে কটাক্ষ করে আজেবাজে কথা শুরু করলে কলা বিক্রেতা বলে উঠেন, প্লিজ ডোন্ট ডিসটার্ব মি, গো ইনসাইড, ইউর সেল ইউ ডু, মাই সেল মি ডু। ক্রেতাদের অনেকেই কলা কেনার পর কলা বিক্রেতার আসল পরিচয় জানতে চেষ্টা করছিলেন।
এ প্রতিবেদকও কৌতূহলী হয়ে তার পরিচয় জানতে চাইলে ঝিনাইদহ জেলার কোটচাঁদপুর থানার বাসিন্দা সাইদুল ইসলাম জানান, তিনি ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত এক দশকেরও বেশি সময় সিঙ্গাপুরে প্রবাসী ছিলেন। অষ্ট্রেলিয়ান একটি কোম্পানিতে ভাল চাকরি করতেন।
মাসে এক লাখেরও বেশি টাকা বেতন পেতেন। কয়েক বছরেই গ্রামের বাড়িতে পাকা দালান তোলেন, বেশ কয়েক বিঘা জমি কিনেন। একই কোম্পানিতে চাকরি করতেন এক মালয়েশিয়ান। পরিচয়ের সূত্র ধরে তার মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে সিঙ্গাপুরে চাকরি দিয়ে কয়েকজনকে নিয়ে যান। এমনি করে বেশ ভালোই টাকা-পয়সা রোজগার করেন।
এক সময় নিজের গ্রাম ও আশপাশের গ্রাম থেকে ২৫ জনকে চাকরি দিয়ে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যেতে তাদের কাছ থেকে অগ্রিম দেড়-দুই লাখ টাকা নিয়ে তাদের পাসপোর্ট ওই মালয়েশিয়ানের কাছে জমা দেন। কিন্তু ওই মালয়েশিয়ান একদিন টাকা নিয়ে জাপান উধাও হয়ে যায়।
সরল বিশ্বাসে টাকা পয়সার লেনদেন হওয়ায় লিখিত কোন প্রমাণও তার কাছে ছিল না। এ কারণে পুলিশের কাছে গিয়ে ঘটনা জানিয়েও লাভ হয়নি।
সাইদুল জানান, দশ বছর সিঙ্গাপুর থাকার সময় দেশে আসলে দু’ হাতে টাকা খরচ করতেন। কারও মেয়ের বিয়ে, কারও পড়াশুনা চালাতে টাকা চাইলে পাঁচ-দশ হাজার টাকা দিয়ে দিতেন। কিন্তু ওই মালয়েশিয়ান ২৫/২৬ লাখ টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যাওয়ায় শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। একপর্যায়ে দেশে ফিরে আসলে পাওনাদাররা টাকার জন্য চাপ দেয়,
বিচার সালিশ বসায়। বিচার সালিশে তিনি জানান, জমি বিক্রি করে সবার টাকা পরিশোধ করে দিবেন। এভাবে লাখ লাখ টাকার মালিক হয়েও ধীরে ধীরে দরিদ্র হন। সাইদুল জানান, নিজে পড়াশুনা না করতে পারলেও তার ছেলেমেয়েকে পড়াশুনা শেখাচ্ছেন।
ঢাকা শহরে ফেরি করে কলা বেচে যা উপার্জন হয় তার বেশিরভাগই দুই ছেলেমেয়ের পড়াশুনার পেছনে খরচ করেন। তার ইচ্ছে ছেলেমেয়েরা পড়াশুনা শিখে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হবে।