পুরাকীর্তি সরদার চাঁদ খাঁর মাজার!

প্রকাশিত: ৮:১৭ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৭

পুরাকীর্তি সরদার চাঁদ খাঁর মাজার!

সুমন মালাকার, কোটচাঁদপুর, ঝিনাইদহঃ
ঝিনাইদহ জেলার কোটচাঁদপুর উপজেলা সদরে সরদার চাঁদ খাঁ’র মাজার অবস্থিত। কোটচাঁদপুর রুপালী ব্যাংকের সম্মুখ দক্ষিনে যে বাঁধানো কবরটি দেখা যায় এটি সরদার চাঁদ খার মাজার। তিনি ছিলেন একজন বুজর্গ কামেল দরবেশ। তাঁর কোটচাঁদপুরে আগমনের মূখ্য উদ্দেশ্য ছিল ইসরামের তৌহিদ বাণী প্রচার। সঙ্গে ছিলেন কতিপয় অনুচর ও শিষ্য-সাগরেত। তিনি দলীয় নেতা ছিলেন বিধায় নামের আগে `সরদার’ অভিধাটি যুক্ত হয়েছে বলে মনে করেন স্থানীয় মুবুব্বীরা। তিনি সরদার চাঁদ খাঁ নামেই সমধিক পরিচিত ছিলেন । তাঁরই প্রিয় শহর কোটচাঁদপুরে তিনি চিরশায়িত হয়েছেন।

সাধারণত আউলিয়া, পীর-দরবেশ, সুফী-সাধক ও আধ্যাত্মিক বুজর্গ ব্যক্তিদের কবরস্থান ও সমাধিস্থল `মাজার’ নামে খ্যাত। মাজার সাধারনত পাঁকা হয়ে থাকে। মাজারকে প্রবিত্র স্থান জ্ঞানে মুসলমানেরা সহ অনেক ক্ষেত্রে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষও মাজারস্থ পীর-আউলিয়ার প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে থাকেন। ঝিনাইদহ জেলার কোটচাঁদপুর বাজারের পুরাতন থানার গলিতে সরদার চাঁদ খাঁর পাঁকা মাজার বিদ্যমান। মাজারটি ছোট হলেও দর্শনীয় । এটি পীর চাঁদ খাঁর মাজার নামে সমাধিক পরিচিত। সরদার চাঁদ খার মৃত্যু হয় ১৬৫৬ সালে অর্থাৎ আজ থেকে প্রায় তিনশত বাষট্টি বছর পূর্বে। তাঁর কবরটি বহু বছর অরক্ষিত ছিল। মাঝে মাঝে ভক্তরা কবরে এসে দোয়া-দরুদ পাঠ করতো এবং সিন্নি বিতরন করতো। জানা যায় ১৯৫৯ সালে পীর চাঁদ খাঁর কয়েকজন ভক্তের প্রচেষ্টায় কবরটি সংস্কার করা হয়। তখন জেনারেল আইয়ুব খাঁন ছিলেন পাকিস্তানের প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও প্রেসিডেন্ট। কবরটি পাঁকা করার ফলে এটি মাজারে পরিনত হয়। কিন্তু মাজারগাত্রে কোন স্মৃতিফলক বা স্মৃতি নিদর্শন দেয়া হয় না, ফলে কবরে সমাহিত ব্যক্তির পরিচয় অস্পষ্ট থেকে যায়। তবে স্থানীয় সবাই একবাক্যে বলেন এটি সরদার চাঁদ খাঁর সমাধি।

জানা যায় কোটচাঁদপুর পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান এ.কে.এম. সিরাজুল হকের প্রচেষ্টায় ১৯৯৭ সালে মাজারটি পুন:সংস্কার করা হয়। ফলে এটি বর্তমানরুপ ও আকারে বড় পরিসরে  হয়েছে। ছাদের উপরে দুটি গোলাকার গম্বুজ। ছাদের চার কোণায় চারটি কলসাকৃতির মিনার এবং মাজারের মেঝেতে ডিম রঙের টাইলস ও পিলারে অফ-গ্রিন রংয়ের টাইলস বসানোর ফলে মাজারের সুন্দর্য বৃদ্ধি পেয়েছে। পরিনত হয়েছে আয়তনাকার দৃষ্টিনন্দন একটি মাজারগৃহে। মাজারের অভ্যন্তরে উত্তর-পশ্চিমকোনে পীর চাঁদ খাঁর উচু পাঁকা কবর সহজেই চোখে পড়ে। ধুসর বর্নের লম্বা কবরটি পিং রংয়ের মোটা কাপড় দিয়ে সর্বদা ঢেকে রাখা হয়।একটি দানবাকস কবরের উত্তর পশ্চিমাংশে প্রতিষ্ঠিত। মাজারের উত্তর পশ্চিমে তিনতলা বিশিষ্ট বাজার জমে মসজিদ বিদ্যমান।  প্রতি শুক্রবার জুমার নামাজে আসা অনেক মুসুল্লী পীর চাঁদ খার মাজার জিয়ারত করেন এবং ভক্তরা দানবাক্সে টাকা পয়সা দিয়ে থাকেন। দানবাক্সে আহরিত টাকা মাজার সংরক্ষণে ব্যয়িত হয় বলে জানা যায় স্থানীয়দের কাছ থেকে।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ