ঢাকা ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ১:৩৯ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ১৮, ২০১৭
ঝিনাইদহের ৩শ বছর পুরোনো ঐতিহ্যবাহী ঝাপাং খেলা অনুষ্ঠিত
আহমেদ নাসিম আনসারী
বিষধর সাপকে বসে আনা মানুষের কাছে চিরকালই আকর্ষণীয়। তারওপর যদি একের পর এক প্রদর্শন করা হয় বিষধর সাপের নানা কৌশল তাহলে তো কথাই নেই। এমনই এক ঝাপাং খেলা (সাপ খেলা) অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ঝিনাইদহ সদর উপজেলার সাগান্না ইউনিয়নের বৈডাংগা গ্রামে। প্রায় ৩ শ’ বছর ধরে এই গ্রামের বাগদি সম্প্রদায়ের মানুষ মনসা মঙ্গলের পূজা উপলক্ষে আয়োজন করে আসছে ঝাপাং খেলা। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও দুই দিন ব্যাপী খেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মোট ১০টি দল অংশ গ্রহন করে।
বাদ্যের তালে তালে আর বাশির সুরে একে একে ঝুড়ি ও হাড়ি থেকে বের হয়ে আসে গোখরা সহ বিভিন্ন বিষধর সাপ। মনসা মঙ্গলের পালা গান সহ বিভিন্ন গানের সাথে বাদ্যের তালে সাপুড়েকে নিজে নাচতে হয় আর সাথে ফনা তুলে সাপও বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শন করে। সাপুড়ের ইশারায় সাপের এই অঙ্গ ভঙ্গি প্রদর্শন মানুষকে দেয় অনাবিল আনন্দ।
ঝিনাইদহ, মাগুরা সহ বিভিন্ন এলাকার বৃদ্ধ, দৃদ্ধা, নারী-পুরুষ শিশু সকলেই উপস্থিত থেকে নিবিড় দৃষ্টিতে উপভোগ করেন এই খেলা। আর খেলাকে ঘিরে এখানে সৃষ্টি হয় উৎসবের আমেজ। বসে ছোট আকারের মেলা।
১০ সাপুড়ে দলের অর্ধ শতাধিক সাপের মধ্যে নিজেকে সেরা প্রমাণ করতে প্রতিটি সাপ প্রদর্শন করে নিজেদের আকর্ষণীয় কসরত। আর এই দুর্লভ দৃশ্য দেখতে দূরদূরান্ত থেকে ছুটে এসেছেন দর্শনার্থীরা। অনেকে জীবনে প্রথম আবার অনেকে অনেক দিন পর দেখছেন এ খেলা। এই ঝাপাং খেলা দেখে খুবই আনন্দিত দর্শক।
এলাকার মেয়ে সুন্দরী দাস জানান, তিনি খেলা দেখতে বাপের বাড়ী বেড়াতে এসেছেন। প্রতিবছর এই ঝাপাং খেলার আয়োজন কওে বাবা-কাকারা। আর সাপ খেলা দেখে তিনি খুবই আনন্দিত।
একই ইউনিয়নের মুন্ন জানান, শুধু সাপ খেলাই নয়। হাজার হাজার মানুষ এখানে জড়ো হয়েছে। অনেকের সাথে দেখা হচ্ছে, কথা হচ্ছে। এক কথায় এই সাপ খেলাকে কেন্দ্র করে একটি মিলন মেলা পরিণত হয়েছে।
ছাত্র মামুন জানান, মানুষকে আনন্দঘন পরিবেশে রাখতে পারলে সমাজ থেকে অপরাধ কমে আসবে, সমাজের উত্তরোত্তর উন্নতি হবে। তাই বাংলাদেশের প্রতিটি ইউনিয়নের এ ধরনের উৎসবের আয়োজন করা উচিত।
ঝিনাইদহের উত্তম সাপুড়ে জানান, ছোট বেলা থেকে এই ঝাপাং খেলা করে আসছি। মানুষকে আনন্দ দেওয়ায় মুল উদ্দেশ্যে। দেশের বিভিন্ন স্থানে ঝাপাং খেলায় অংশ নেন তিনি।
এ ব্যাপারে আয়োজক ঝাপাং খেলা আয়োজক কমিটি, ও বৈডাংগা মনসা মন্দির কমিটির সভাপতিপ্রেম কুমার জানান, গ্রাম বাংলার হারানো এই ঐতিহ্য বর্তমান প্রজন্মের সামনে তুলে ধরতে এই খেলার আয়োজন করেছেন তিনি। এছাড়াও সমাজ থেকে সকল প্রকার অন্যায় অপরাধ মুছে ফেলে একটি মডেল ইউনিয়ন গড়ার জন্য এই ঝাপাং খেলার আয়োজন। বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামে এই ঝাপাং খেলার আয়োজন করা উচিত বলে মনে করেন তিনি।
Design and developed by zahidit.com