ঢাকা ১লা ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৮ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২রা শাবান, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৯:৪৫ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ৬, ২০১৭
নির্বাচনের এক বছর বাকি থাকতেই প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে এলাকায় প্রচার কাজ শুরু হয়ে গেছে। মোড়ে মোড়ে ঝুলছে ডিজিটাল সাইনবোর্ড। সম্ভাব্য প্রার্থীরা নানাভাবে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছেন। চলছে গাড়ি ও হেলিকপ্টার মহড়াও। শৈলকুপা উপজেলার একটি পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়ন নিয়ে ঝিনাইদহ-১ আসনে নামিদামি শিল্পীদের আনাগোনাও দেখা যাচ্ছে। টানা তিন দফায় এ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জয়লাভ করেন। আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনেও আসনটি নিজেদের কব্জায় রাখতে সচেষ্ট শাসক দল। বিএনপিও চায় পরাজয়ের ইতিহাস মুছে ফেলে যেকোনো মূল্যে আসনটি পুনরুদ্ধার করতে। আগের নির্বাচনের ভোটের হিসাব বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বড় দুই দলের মধ্যে এ আসনে ভোটের ব্যবধান হবে সামান্যই। বলাবলি হচ্ছে, আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি যে দলই বিজয়ী হোক না কেন লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি। এ আসন থেকে জামায়াতের কোনো প্রার্থীর প্রচার না দেখা গেলেও জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে মনিকা আলমের নাম শোনা যাচ্ছে।
২০০১ সালের নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে প্রথমবারের মতো এমপি হন আওয়ামী লীগের
আবদুল হাই। ২০০৮ সালের নির্বাচনেও তিনি আসনটি ধরে রাখতে সক্ষম হন। সর্বশেষ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনেও আবদুল হাই এমপি হয়ে সংসদে যান। আগামী নির্বাচনে তিনি ছাড়াও আরও তিনজন প্রার্থী আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাচ্ছেন। এদের মধ্যে মাঠে সক্রিয় রয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নব্য সদস্য পারভীন জামান কল্পনা। তিনি কেন্দ্রীয় নেতা মরহুম অধ্যক্ষ কামরুজ্জামানের মেয়ে। কল্পনা জামান রাজনীতিতে নবীন হলেও তিনি দলে নিজের অবস্থান জানান দেয়ার চেষ্টা করছেন নানাভাবে। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য হওয়ার সূত্র ধরে স্থানীয়ভাবে দলীয় সভা সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন কল্পনা। তিনি ছাড়াও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকায় রয়েছেন কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক শিল্পপতি নজরুল ইসলাম ওরফে দুলাল বিশ্বাস। দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষেই কাজ করার অঙ্গীকার করেছেন তিনি। তিনি যুগান্তরকে বলেছেন, আগামী নির্বাচনে মনোনয়নের ব্যাপারে আশাবাদী। তবে দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষে কাজ করে যাব। আওয়ামী লীগের আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী হচ্ছেন সাবেক ছাত্রনেতা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা নায়েব আলী জোয়ার্দার। জানতে চাইলে তিনি দলের কাছে মনোনয়ন চাওয়ার কথা জানিয়ে যুগান্তরকে বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে গণমানুষের জন্য কাজ করছি। এরই স্বীকৃতি হিসেবে দল আমাকে মনোনয়ন দেবে বলে আশা করছি। বর্তমান এমপিকে ছাড় না দেয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নের জন্য লড়াই করে যাব। নৌকাকে বিজয়ী করার ব্যাপারে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাসী। এমপি আবদুল হাইয়ের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ করে নায়েব আলী জোয়ার্দার বিভিন্ন মহলের দৃষ্টি কাড়তে সক্ষম হন। বর্তমান এমপির বিরুদ্ধে একটি অংশ তাদের শক্তি বৃদ্ধি করছেন বলে জানা গেছে। গত নির্বাচনেও মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাইয়ের বিরুদ্ধে ভোটে মাঠে নামেন নায়েব আলী জোয়ার্দার। ওই নির্বাচনে জাতীয় পার্টির (জেপি) গোলাম মোস্তফাও প্রার্থী হয়েছিলেন। তবে অল্প ভোটের ব্যবধানে আবদুল হাই উৎরে যান। সূত্র বলছে, জিসান ট্রেডার্স নামে এমপির একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। টেন্ডারবাজির সঙ্গে জড়িতরা তার এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে আসছেন বলে অভিযোগ। এ আসনটি নানা দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। ’৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার প্রথম দিকেই ৩০ মার্চ প্রথম খান সেনাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন এই এলাকার মুক্তিকামী জনতা। তারই জেরে উপজেলার বিভিন্ন গণকবরে ঘুমিয়ে আছেন কয়েকশ’ বীর মুক্তিযোদ্ধা।
হামলা মামলায় কাবু বিএনপির মধ্যে অস্থিরতা শুরু হয়েছে। নির্বাচনী প্রচারে সরব না হলেও উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি আবদুল ওহাবের দুর্নীতির মামলার সাজা হওয়ার পর সেই অস্থিরতা আরও বেড়েছে। আদালত তাকে আট বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন। তিনি এখন জেলে। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে তার ৯৩ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ।
নির্বাচন কমিশনের দেয়া তথ্য মতে, ১৯৯১ সালে বিএনপির আবদুল ওহাব প্রথম শৈলকুপা আসনে জয়লাভ করেন। ১৯৯৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও এমপি হন ওহাব। ২০০১ সালের নির্বাচনে মাত্র ৩৪৬ ভোটে প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগের প্রার্থীর কাছে হেরে যান তিনি। এর পর থেকে আসনটি আওয়ামী লীগেরই। ওহাবের বিরুদ্ধে সাজার রায়ের এ সুযোগে বিএনপির একাধিক নেতা মাঠে নেমে পড়েছেন। এরা হলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির বর্তমান মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান আসাদ এবং সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রনেতা জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু। আসাদ বর্তমানে সুপ্রিমকোর্টে আইন পেশায় নিয়োজিত। ২০০৬ সালের দিকে সাবেক সচিব বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার শহীদুল ইসলামের হাত ধরে দলে যোগ দেন তিনি। ওহাব বিরোধীদের কাছে টেনে নিয়েছেন আসাদ। একসময় জাসদের ছাত্র রাজনীতিতে ছিলেন আসাদুজ্জামান আসাদ। ওহাবের অনুপস্থিতিতে আসাদের সমর্থনের পাল্লা দিনে দিনে আরও ভারি হচ্ছে বলে মনে করছেন দলটির প্রবীণ নেতারা। নির্বাচনী ভাবনা নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে দলের মনোনয়ন চাইব। আমার বিশ্বাস মনোনয়ন দিলে দলকে বিজয় উপহার দিতে পারব। সাবেক আটজন ইউপি চেয়ারম্যানেরই সমর্থন রয়েছে আমার প্রতি। ২০০৭ সালেও আশাবাদী ছিলাম মনোনয়নের ব্যাপারে। মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক ছাত্রনেতা জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু শৈলকুপা বিএনপির একটি গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। তা ছাড়া বিশেষ কোটায় প্রার্থী হওয়ার সুযোগ রয়েছে বলে দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে প্রচার রয়েছে।
পরিসংখ্যান বলছে, ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কাজী খাদেমুল ইসলাম, ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারির ভোটে জাসদের গোলাম মোস্তফা, ১৯৮৬ সালের ৭ মে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মো. কামরুজ্জামান এবং ১৯৮৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হন জাসদ রব থেকে দবির উদ্দিন জোয়ার্দার।
বলা বাহুল্য, এ উপজেলার গ্রামে গ্রামে সামাজিক সংঘাত চরমে। তুচ্ছ ঘটনায় খুন হচ্ছে নিরীহ মানুষ। এসব কারণে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কয়েকশ’ পরিবার ঘরবাড়ি ছেড়েছেন। সামাজিক দ্বন্দের কারণে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন
Design and developed by zahidit.com