৫ ভাইরার ছোট প্রজেক্টে বড় স্বপ্ন

প্রকাশিত: ৯:১৭ অপরাহ্ণ, জুন ২৮, ২০২১

৫ ভাইরার ছোট প্রজেক্টে বড় স্বপ্ন

বিশেষ প্রতিনিধি॥
আন্তরিকতা থাকলে যে কোন কাজে সফলতা পাওয়া যায়, তা দেখিয়ে দিলেন এম এম গ্রীণ ফিল্ড নামের কৃষি প্রজেক্টের উদ্যোক্তা ৫ ভাইরা ভাই। তাদের কৃষি প্রজেক্টে বিভিন্ন জাতের ড্রাগন চাষ শুরু করার মাত্র দুই বছরে পেয়েছেন অভাবনীয় সফলতা। উদ্যোক্তা ৫ ভাইরা ভাই বিভিন্ন পেশায় কর্মরত থেকেও কৃষির প্রতি হৃদয় নিঙড়ানো ভালোবাসার বর্হিপ্রকাশ ঘটিয়েছেন তাদের গড়ে তোলা কৃষি প্রজেক্টে। তারা এখন শিক্ষিত ও বেকার যুবকদের অনুকরনীয় হয়ে উঠেছেন। ঝিনাইদহের সদর উপজেলার কুমড়া বাড়িয়া ইউনিয়নের গোয়াইল বাড়ি গ্রামে গড়ে তোলা কৃষি প্রজেক্ট এম এম গ্রীণ ফিল্ডের এমডি লিয়াকত আলী জানান, তার মেঝ ভাইরা ভাই সাংবাদিক ও ইউটিউবার মিজানুর রহমান তাদেরকে (ভাইরা ভাইদের) বিভিন্ন সময় তার এলাকার (ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে) ড্রাগন বাগানে নিয়ে যেতেন। বাগান দেখতে দেখতে একসময় বাগান করার ইচ্ছা জাগে। তারপর ২০১৯ সালের মে মাসে এক একর জমিতে ড্রাগন চাষ শুরু করা হয়। এই বছরের (২০২১) জুন মাস পর্যন্ত প্রায় ৩ লক্ষ টাকার ফল বিক্রি হয়েছে। এই বছরের বাকি সময়ে আরও ৫ লক্ষ টাকার ফল বিক্রি করা যাবে বলে আশা করছেন।
এমডি শিক্ষক লিয়াকত আলী জানান, তার অন্য ৪ পার্টনার সাংবাদিক মিজানুর রহমান, ব্যাংকার মোত্তাসিম বিল্লাহ শিপলু,ফার্মাসিউটিক্যাল্সে কর্মরত রাহাত খান ও আমেরিকান প্রবাসি রাশিদুল ইসলাম এই প্রজেক্টে প্রায় ১০লাখ টাকা ইনভেস্ট করেছেন। সবাই বিভিন্ন পেশায় কর্মরত থাকায় তাদের খরচ অন্যদের তুলনায় বেশি হয়েছে। তবে তাদের আশা এ বছরেই খরচের টাকা উঠে আসবে।


সরজমিনে বাগান ঘুরে দেখা গেছে এই বাগনের অধিকাংশ গাছে বেশ বড় বড় ফল এবং ফলনও বেশি। বাগানে রয়েছে লাল, সাদা, পিংক, আমেরিকান বিউটি ও হলুদ জাতের ড্রাগন। হলুদ ড্রাগনগুলো দেখতে খুবই সুন্দর। উদ্যোক্তা লিয়াকত জানান, তার সাংবাদিক ভাইরা ভাই বিভিন্ন বাগান ঘুরে ভালো জাতের চারা সংগ্রহ করায় তাদের বাগানে ড্রাগনের ফলন ভালো হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন জাতের ড্রাগন থাকায় এবং ফুলে পরাগায়ন করায় ফলের সাইজ বড় হচ্ছে। তিনি আরও জানান অনেকটা শখের বশে বাগান করলেও এখন এই প্রজেক্টটিকে কলেবরে বড় করতে চান। ভবিষ্যতে আরও অন্যান্য প্রজেক্ট করার ইচ্ছা আছে তাদের। তাদের এই প্রজেক্টে ১ জনের স্থায়ী কর্মসংস্থান হয়েছে। তাকে ভালো অংকের টাকা বেতন দেয়া হচ্ছে। এছাড়া ৫/৭জন লোকের অনিয়মিত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। প্রজেক্টটিকে ঘিরে কয়েকজনের রুটি রুজির ব্যবস্থা হয়েছে এতেই আমরা খুশি,জানান প্রজেক্টের ডিরেক্টর মিজানুর রহমান।
লিয়াকত জানান, তাদের প্রজেক্টে ৬৪০টি খুঁটি রয়েছে। প্রত্যেক খুঁটিতে ফল এসেছে। তিনি আরো জানান, ড্রাগন একটি বহুবর্ষজীবি টেকসই ফল। খুঁটি পদ্ধতিতে একটি খুঁটিতে চারটি চারা রোপণ করতে হয়। রোপনের পর ফল আসতে সময় লাগে মোটামুটি ১৮ মাস। ফল আসা পর্যন্ত খুঁটি প্রতি খরচ পড়ে গড়ে এক হাজার টাকা। একটি খুঁটিতে এক বছরে গড়ে পঁচিশ থেকে তিরিশ কেজি ফল উৎপাদিত হয় যার বাজার মূল্য গড়ে দুইশত টাকা কেজি হলেও পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা হয়। ড্রাগন ফলের মৌসুম শুরু হয় এপ্রিল মাস হতে আর একটানা নভেম্বর মাস পর্যন্ত কয়েক দফায় ফল আসে। ফুল আসার ৩০ থেকে ৩৫ দিনের মাথায় ড্রাগন তোলা যায়। এক নাগাড়ে প্রায় ৫ থেকে ৬ মাস ফল সংগ্রহ করা যায়। ড্রাগন গাছে মূলত জৈব সার ও সেই সাথে সুষম মাত্রায় রাসায়নিক সার, ছত্রাক দমনে রোবলাল,অ্যামিস্টার টপ জাতীয় ঔষধ ও পিপড়া দমনে সাইফারম্যাথিন গ্রুপের কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলা কৃষি অফিসার মো: জাহিদুল করিম জানান, এম এম গ্রীণ ফিল্ড এর উদ্যোক্তা ৫ ভাইরা ভাইয়ের চাষ পদ্ধতি প্রসংসার দাবি রাখে। বিদেশি ফল ড্রাগন লাভজনক হওয়ায় অনেকেই তাদের সাথে যোগাযোগ করছে। তিনি জানান, ক্যাকটাস গোত্রের এই ফলের গাছ দেখে সবাই একে সবুজ ক্যাকটাস বলেই মনে করেন। সাধারণত মধ্য আমেরিকায় এ চাষ বেশি হয়। ড্রাগন ফল দেখতে খুব আকর্ষনীয়। এর স্বাদ হালকা মিষ্টি। আমেরিকাসহ এশিয়া মহাদেশের অনেক দেশে বাণিজ্যিক ভাবে ড্রাগন ফল চাষ হয়ে থাকে। ড্রাগন ফলে ক্যালোরি খুব কম থাকায় এ ফল ডায়াবেটিস ও হৃদরোগীদের জন্য ভালো। এতে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি ও আয়রন রয়েছে। যে কারনে শরীরের চর্বি কমায় ও রক্তের কোলেস্টেরল কমানোসহ বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করে। তাদের কৃষি প্রজেক্ট তৈরিতে কৃষি অফিস থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে বলে যোগ করেন তিনি।

 

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ