কালীগঞ্জে ৫শ বছরের তেঁতুল গাছ কাটতে চলছে অপতৎপরতা

প্রকাশিত: ১:৪৪ অপরাহ্ণ, জুন ২৫, ২০২০

কালীগঞ্জে ৫শ বছরের তেঁতুল গাছ কাটতে চলছে অপতৎপরতা

বিশেষ প্রতিনিধি, কালীগঞ্জ ॥ ২৫ জুন’২০২০
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের বালিয়াডাঙ্গা বাজারের একটি তেঁতুল গাছ কাটতে অপতৎপরতা চালাচ্ছে দুই ইউপি সদস্যসহ বেশ কিছু মানুষ। গাছটির বয়স আনুমানিক ৫০০ বছর হবে। আম্পান ঝড়ে বাজারের তেঁতুল গাছটির একটি ছোট ডালও ভেঙ্গে পড়েনি। গাছের কোন শুকনো ডালও নেই। এই গাছের ডাল ভেঙ্গে পড়ে কোন ব্যক্তির হতাহতের ঘটনাও কখনো ঘটেনি। কিন্তু এরই মাঝে এই গাছটিকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে কাঁটার চেষ্টা করা হচ্ছে। এই গাছের জন্য আমরা জীবন দিতে প্রস্তুত আছি। কথাগুলো বলছিলেন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের আব্দুল মান্নান (৬০) নামের এক বৃদ্ধ।

 

তিনি আরো জানান, বালিয়াডাঙ্গা বাজারের এই তেঁতুল গাছটি আমাদের ঐতিহ্য। বাজারের সবকিছু এই গাছকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। গাছের তলায় সপ্তাহে দুইদিন বাজার বসে। এছাড়াও প্রচ- খরায় এই গাছই আমাদের ছায়া দিয়ে বাঁচিয়ে রাখে। এই গাছের নিচেই আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। দীর্ঘদিন ধরে দোকানদারি করছি। এই তেঁতুল গাছের দ্বারা কোনদিন ক্ষতি হয়নি।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, গত ২২ জুন ৫০০ বছরের তেঁতুল গাছটিকে বিপজ্জনক ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতি হওয়ার আশংকা দেখিয়ে আনুমানিক ৫০০ বছরের তেঁতুল গাছটি কর্তনের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট আবেদন করেছেন ৬নং ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের ৭নং ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন ও ৮নং ইউপি সদস্য কে.এম শামছুল হক। এছাড়াও গ্রামবাসীর পক্ষে অনেকে স্বাক্ষর করেছেন। আর এই আবেদনপত্রে জোর সুপারিশ করেছেন উক্ত ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম সানা।

বুধবার সকালে বালিয়াডাঙ্গা বাজারের গাছটির নিচে কথা হয় প্রায় ৩০ জন ব্যক্তির সাথে। তারা জানায়, বাজারের হাট-চান্দি নির্মাণের জন্য আমাদের কাছ থেকে স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে। গাছ কাঁটার ব্যাপারে কিছু জানানো হয়নি। এই গাছটি আমাদের ঐতিহ্য। এছাড়া গত আম্পান ঝড়ে এই গাছের একটি ছোট ডালও ভেঙ্গে পড়েনি। তারা সকলেই গাছটি না কাটার জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে অনুরোধ করেন এবং গাছটি না কাঁটার ব্যবস্থা নিতে এলাকাবাসীর গণস্বাক্ষর করে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে জমা দিবেন।

বালিয়াডাঙ্গা বাজারের পল্লী চিকিৎসক ডাঃ সিদ্দিকুর রহমান (৬৫) জানান, গ্রামবাসী ও বাজারের শতকরা ৯৫ মানুষ গাছটি না কাটার পক্ষে। এই গাছটির দ্বারা কেউ কখনো ক্ষতিগ্রস্থ হয়নি। গাছ কেটে হাট চাঁদনী নির্মাণ না করে বাজারের পাশে অনেক সরকারি জমিতে দোকান আছে সেগুলো উচ্ছেদ করলেই বড় হাট চান্নি নির্মাণ করা সম্ভব হবে। এরজন্য আনুমানিক ৫০০ বছরের গাছটি কাটার দরকার নেই।

সুলতান আহমেদ নামের এক যুবক জানান, এই গাছটি বাজারের ঐতিহ্য। গাছটি বাঁচাতে জীবন দিতে রাজি আছি। গাছ না কাটার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।

৬নং ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম সানা বলেন, বালিয়াডাঙ্গা বাজারের পুরাতন তেঁতুল গাছটি কাটার ব্যাপারে একটি দরখাস্ত ইউএনওকে দেওয়া হয়েছে। এলাকাবাসী যদি না চাই তাহলে গাছ কাটা হবে না।

কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুবর্ণা রাণী সাহা বলেন, বালিয়াডাঙ্গা বাজারের গাছটি কাঁটার ব্যাপারে এখনো কোন আবেদন তিনি পাননি।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ