ঢাকা ২৬শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৪শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৭:৩০ অপরাহ্ণ, জুন ২, ২০২০
নয়ন খন্দকার, কালীগঞ্জ॥
পল্লী কবি জসিম উদ্দীন “আসমানী কবিতায়” আসমানী ও তার পরিবারের যেসব বর্ণনা দিয়েছিলেন তার চেয়ে কোন অংশে কম নয় ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের আসমানীর। আর আসমানীর গল্প ফুটে উঠেছে এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর। গ্রামাঞ্চলসহ সারা কালীগঞ্জে আসমানীর গল্পই শুনা যাচ্ছে। বলছিলাম ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার ডাউটি গ্রামের ওলিয়ার মোল্ল্যার মেয়ে ও কোলাবাজার ইউনাইটেড মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী আসমানীর কথা। যে সম্প্রতি এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ অর্জন করেছে।
পিতা ওলিয়ার রহমান পরের জমিতে কামলা (দিনমজুর শ্রমিক) খাটেন। বসতবাড়ির ৫ শতক জমি ছাড়া মাঠে কোন চাষযোগ্য জমি নেই ওলিয়ারের। সেখানেই ভাঙা চোরা মাটির দেয়াল ও বেড়ার একটি ঘর। এর পাশেই রয়েছে ছনের ছাউনি ও পাটকাঠি দিয়ে ঘেরা আরেকটি ঝুপড়ি ঘর। সেখানেই দুই ভাইবোন আর পিতা মাতাকে সাথে নিয়ে বসবাস করেন আসমানী।
প্রাইভেট পড়া তো দুরের কথা । অভাবের কারনে দু’বেলা ঠিকমত খাবারই জোটেনি আসমানীদের। শত বাধা বিপত্তি পেরিয়ে এ আসমানী এবার এসএসসি পরীক্ষায় মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ ৫ পেয়েছে। পরীক্ষার ভাল ফলাফল সবাই যখন আনন্দ উল্লাসে মেতে রয়েছে সেখানে আসমানীর ভাল ফলাফল যেন কপালে কালো মেঘের ঘনঘটা দেখা দিয়েছে।
আসমানীর পিতা ওলিয়ার রহমান মোল্যা জানান, আমার মেয়ে পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে। সেটা কি জানিনা। তবে সবাই বলছে মেয়েতো ভাল ফল করেছে। শুনে খুব ভাল লাগছে যে সবাই আমার মেয়ের সুনাম করছে। কিন্তু আমি তো এখন চিন্তায় আছি আগামীতে মেয়েকে কলেজে কিভাবে পড়াবো। এমন ক্ষমতা তো আমার নেই। তিনি আরো জানান, তার ২ মেয়ে ও এক ছেলে । বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। ছোট ছেলে সাব্বির তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ে। ছেলে মেয়ে স্ত্রীকে নিয়ে ছনের ঘরে তারা কোন রকম বসবাস করেন। এরমধ্যে কিভাবে তিনি মেয়ে কে কলেজে পড়াবেন বলে চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে।
ওলিয়ার আরো জানান, অভাবের সংসারে মেয়ের লেখাপড়ার খরচ ঠিকমত যোগাতে পারিনি। টাকার অভাবে তার ভালো পোশাক ও স্কুলে যাওয়া আসার খরচ দিতে পারেনি। এখন শুনছি মেয়ে পরীক্ষায় ভালো করেছে। আগামীতে কিভাবে মেয়েকে পড়াবো তা ভাবছি।
কোলাবাজার ইউনাইটেড হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল ওহাব জোয়ার্দার জানান, আসমানী অত্যন্ত মেধাবী এবং ভদ্র। সে ক্লাসে সব সময় মনোযোগী থাকতো। সে জিপিএ-৫ অর্জন করায় বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক-কর্মচারী অত্যন্ত খুশি। আমরা আসমানীকে নিয়ে গর্বিত। আগামীতে কিভাবে তার লেখাপড়া অব্যাহত রাখা যায় সে বিষয়েও আমরা পদক্ষেপ নিব।
Design and developed by zahidit.com