ঢাকা ২৬শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৪শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৬:১১ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৪, ২০২০
নয়ন খন্দকার, কালীগঞ্জ ॥
প্রবাদে আছে “যশোরের যশ,খেজুরের রস” এ অঞ্চলে খেজুর গাছ বেশি থাকায় প্রতিবছর শীত মৌসুমে এখানে পাওয়া যায় প্রসিদ্ধ খেজুর গুড় ও পাটালি। প্রতি সোম ও শুক্রবার গুড় ও পাটালি বিক্রির বড় হাট বসে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে। রসের তাজা ঘ্রাণে উৎপাদন হওয়া গুড় ও পাটালি যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। কালীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে গাছিরা তাদের উৎপাদিত খেজুর গুড় ও পাটালি বাজারে বিক্রির জন্য আনেন। বাইরের মোকামীদের কাছে কালীগঞ্জের গুড়ের হাট ব্যাপকভাবে পরিচিত। কিন্তু দিন দিন খেজুর গাছ কমে যাওয়াসহ অনেক গাছিরা গাছ টাকা বন্ধ করে দিয়েছেন। যার কারনে জৌলুশ হারাতে বসেছে কালীগঞ্জের বিখ্যাত গুড় ও পাটালি। তাছাড়া চলতি শীত মৌসুমের প্রথম দিকে বৃষ্টির কারনে এবার বাজারে গুড় উঠেছে অনেক কম। তারপরও বৃহত্তর যশোর অঞ্চলের মধ্যে কালীগঞ্জের খেজুর গুড়ের হাট এখনো টিকে আছে।কালীগঞ্জের উৎপাদিত খেজুর গুড় যাচ্ছে ঢাকা, সিলেট, বরিশাল, ফরিদপুর, মাদারীপুর, কুমিল্লা, খুলনা, সাতক্ষীরা,কুষ্টিয়া, ঝালকাটিসহ বিভিন্ন জেলাতে।
কালীগঞ্জের হাটে মোকাম করতে আসা কুষ্টিয়ার হরিগোবিন্দপুর গ্রামের নিয়ামত আলী জানান, তিনি ৪৭ বছর ধরে গুড়ের ব্যবসা করছেন। প্রতিবছর সোম ও শুক্রবারের হাটে তিনি কালীগঞ্জে গুড় কিনতে আসেন। চলতি বছর হাটে গুড় অনেক কম আসছে। শীত মৌসুমে বৃষ্টির কারনে গাছীর ঠিকমত গাছ কেটে সঠিক সময়ে গুড় উৎপাদন করতে পারেননি। যার কারনে গুড় ও পাটালি হাটে কম এসেছে। চলতি হাটে তিনি প্রায় ২৫ হাজার টাকা মূল্যে ২৮ ঠিলে ( মাটির মাত্র) অর্থাৎ ৭ মণ গুড় কিনেছেন। এসব গুড় তিনি ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি প্রতি কুষ্টিয়া বাজারে পাইকারী ও খুচরা দরে বিক্রি করবেন।
বারবাজার থেকে মোকাম করতে আসা লুৎফর রহমান জানান, তিনি ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে ১৬ মণ ঝোল গুড় কিনেছেন। এসব গুড় ৬০ থেকে ৭০ টাকা দরে বিক্রি করবেন। তিনি আরো বলেন, দানা গুড়ের দাম বেশি আর ঝোল গুড়ে দাম কম। এক ঠিলে দানা গুড় ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। আর ঝোল গুড় বিক্রি হয় ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা করে। তিনি ১৮ বছর ধরে গুড়ের ব্যবসা করে আসছেন বলেও উল্লেখ করেন।
কালীগঞ্জের শ্রীরামপুর গ্রামের আলিনুর রহমান জানান, বরিশাল, যশোর, খুলনা, পাইকগাছা, ঝালকাটিসহ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার মহাজনদের গুড় কিনে ট্রাকে করে সংশ্লিষ্ট জেলায় পাঠিয়ে দেন। বাজারের দাম দর অনুযায়ি মহাজনরা তাকে টাকা পাঠিয়ে দেন। এজন্য অনেক দুরের মহাজনকে কালীগঞ্জের বাজারে আসতে হয় না।
অপরদিকে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বিষয়খালী গ্রাম থেকে পাটালি বিক্রি করতে আসা খলিল বিশ্বাস জানান, তিনি দীর্ঘদিন ধরে পাটালি বিক্রি করছেন। তিনি সরাসরি গৃহস্থদের কাছ থেকে কেজি প্রতি ১২০ থেকে ১৪০ টাকা দরে পাটালি কিনে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি প্রতি বিক্রি করছেন। কেজিতে তাদের ১০ থেকে ২০ টাকা লাভ থাকে। দাম ভাল পাওয়া গেলে কখনো কেজি প্রতি ৩০ থেকে ৪০ টাকা লাভ হয়।
কালীগঞ্জের স্থানীয় বাসিন্দা তোবারক আলী ম-ল জানান, বিভিন্ন স্থান থেকে হাটে আসা মোকামীদের তিনি গুড় কিনে দেন। বড় বড় মোকামীরা ঠিলে (মাটির হাড়ি) থেকে গুড় ঢেলে প্লাস্টিক ড্রামে ভরে নিয়ে যান। ট্রাক, ভ্যান, আলমসাধুসহ বিভিন্ন যানবাহনে এসব গুড় চলে যাচ্ছে খুলনা,কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, ভাঙ্গা, বরিশাল, ঝালকাটি, বাঘারপাড়াসহ দেশের অন্যান্য জেলা ও উপজেলা শহরে।
কালীগঞ্জ গুড় হাটার ইজারাদার আতিয়ার রহমান জানান, কালীগঞ্জের খেজুর রসের গুড় ব্যাপকভাবে প্রসিদ্ধ। এ গুড়ে কাঁচা রসের ঘ্রাণ পাওয়া যায়। তাই ব্যবসায়ীদের কাছে আমাদের এলাকার গুড়ের অনেক সুনাম রয়েছে। তাছাড়া শীত মৌসুমে গুড় দিয়ে অনেক পিঠা তৈরি করা হয়। শীতে ক্রয় করা গুড় ব্যবসায়ীরা সারা বছর জুড়ে তা বিক্রি করে থাকেন।
কিন্তু ইটভাটা মালিকরা খেজুর গাছ ক্রয় করে পুড়িয়ে ফেলছেন। আবার অনেক গাছিরা গাছ টাকা বন্ধ করে দিয়েছেন। তাই এখন আর আগের মত হাটে গুড় আসছে না। তবে বৃহত্তর যশোর অঞ্চলের মধ্যে কালীগঞ্জের খেজুর গুড়ের হাট এখনো টিকে আছে। হয়ত আগামীতে কালীগঞ্জের খেজুর গুড়ের হাট জৌলুশ ধরে রাখতে পারবে না বলে তিনি আক্ষেপ করেন।
Design and developed by zahidit.com