বিশিষ্ট কবি ও গীতিকার ড. খান মোঃ মনিরুজ্জামান এর কালজয়ী কবিতা “সার্জন ডাঃ হ্যামিল্টন নিরক্ষর”।

প্রকাশিত: ৮:৪৭ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ১৫, ২০২০

বিশিষ্ট কবি ও গীতিকার ড. খান মোঃ মনিরুজ্জামান এর কালজয়ী কবিতা “সার্জন ডাঃ হ্যামিল্টন নিরক্ষর”।

ড. খান মোঃ মনিরুজ্জামান

বিশ্ব বিখ্যাত সার্জন ডাঃ হ্যামিল্টন নিরক্ষর,
মাষ্টার অফ মেডিসিন উপাধিতে চির ভাস্বর।
জীবনে কখনো স্কুলে যাননি এ গুণী ডাক্তার,
পুঁথিগত বিদ্যায় তাঁর নেইতো কোন কারবার।
তারপরও বিশ্বে খ্যাত ডাক্তার, এটা কিভাবে?
লক্ষ্যে পৌঁছাতে নিরন্তর প্রচেষ্টা ছিল স্বভাবে।
কেপটাউন চিকিৎসা বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞানাধার,
চিকিৎসা জগতে অদ্বিতীয় দৃষ্টান্ত চমৎকার।
বিশ্বের প্রথম বাইপাস সার্জারি এ বিদ্যাগারে,
সার্জনের সার্জন নিরক্ষর চিকিৎসা মাঝারে।
ডাঃ ডেভিড ডেট এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে,
পুরস্কারে হ্যামিল্টনের ঘোষণা দেন সম্মানে।
পেলেন সবে নিরক্ষর এক সার্জনের তালাশ,
নাম শুনে সবাই দাঁড়িয়ে সবে করেন উল্লাশ।
চিকিৎসা বিজ্ঞানে তাঁর যে স্মরণীয় অবদান,
চিকিৎসা জগতে সে আজ কিংবদন্তি মহান।

গরীব ঘরের ছেলে ইতিহাস খ্যাত হ্যামিল্টন,
প্রত্যন্ত সোনিট্যানি ভিলেজের মানিক রতন।
পশুপালক মাতাপিতা বসুধায় তাঁর পরিচয়,
সে আশরাফ ধন্য জীবনে যাঁর পুণ্য কর্মময়।
পিতৃপীড়ায় কেপটাউন সিটিতে কর্ম সন্ধানে,
রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ যোগ্যতাজ্ঞানে।
কেপটাউন মেডিক্যাল নির্মাণে যোগাড়েগিরি,
আন্তরিকতা ভরা কাজে তাঁর নিপুণাতার শ্রী।
বেশ কয়েক বছর নির্মাণ কাজে তাঁর যোগ্যতা,
কর্তৃপক্ষের নজর কাড়ে তা, তাঁর মানসিকতা।
মেডিকেল কলেজে তাঁর চাকুরি হয় একখানা,
টেনিস কোটে ঘাস ছাঁটাই তাঁর কর্ম ষোলআনা।
তিন বছর পর তিনি পেলেন এক সুবর্ণ সুযোগ,
চিকিৎসা শাস্ত্রের এক স্তরে তাঁর আত্মনিয়োগ।
সেদিন প্রফেসর রবার্ট ডায়াসের গবেষণা হেন,
ঘাড় নিচুতে জিরাফের সার্কুলেশন কমে কেন?

তাঁর রিসার্সের প্রতিপাদ্য মজার বিষয়ও বটে,
মনোস্থ গলা অপারেশনে কি কারণ মেলে ঘটে।
অপারেশন চলছে ওটিতে জিরাফ অবচেতন,
হঠাৎ জিরাফ ঘাড় নাড়ানোয় বিপদ বিরাজন।
ঘাস কাটায় মগ্ন হ্যামিল্টনকে ডাকলেন সার্জন,
আট ঘন্টা জিরাফের গলা ধরলেন হ্যামিল্টন।
অপারেশন সফল, হ্যামিল্টন সফল গলা ধরায়,
বিধাতাই গোপনে তাঁরে সার্জনের তাজ পরায়।
টানা আট ঘন্টা ধরে কাজের প্রতি তাঁর সম্মান,
আবার নীরবে টেনিস কোর্টে কাজে লেগে যান।
রবার্ট ডায়াস তার দৃঢ়তা ও কর্মনিষ্ঠা দেখে মুগ্ধ,
ল্যাব এসিষ্ট্যান্ট পদোন্নতিতে শুরু ডাক্তারী যুদ্ধ।
নিত্যদিন সার্জনগণ করে হাজারো অপারেশন,
হেল্পার হিসাবে তাঁর অপারেশনে মনোনিবেশন।
এভাবেই চলতে থাকে বেশ কয়েক বছর সময়,
অভিজ্ঞতার ঝুলি সমৃদ্ধি হতে সমৃদ্ধিশালী হয়।

পরে ডাঃ বার্নডের অপারেশনে একদা ষ্টিচ দেন,
নিপুণ ষ্টিচ দেখে বার্নড তাঁকে সেলাই সপে নেন।
দীর্ঘকাল অপারেশন থিয়েটারে নান্দনিক কাজ,
কাজই তাঁর গলায় পরিয়ে দেয় সার্জনের তাজ।
ডিগ্রীধারী সার্জনের চেয়েও তাঁর না ডিগ্রী বড়,
সার্জনগিরি অত হবেনা অনেক করলেও জড়।
ক্ষুদে ডাক্তারদের শিক্ষক হ্যামিল্টন অশিক্ষিত,
বিখ্যাত ডাক্তাররা তাঁর কাছে শিষ্য বনে দীক্ষিত।
লিভারের মধ্যে এক বিশেষ ধমনী তাঁর আবিষ্কার,
লিভার ট্রান্সফার তাই হয়ে গেল সময়ের ব্যাপার।
নিরক্ষর হ্যামিল্টনের পঞ্চাশ বছর চাকুরি কালে,
তিনি একদিনও ছুটিতে যাননি সমগ্র কালাকালে।
প্রতিদিন চৌদ্দ মাইল পদব্রজে হত তাঁর ডাক্তারী,
অশিক্ষিত এ বিখ্যাত ডাক্তারের জুড়িমেলা ভারি।
বিশ্ব চিকিৎসা জ্ঞানে অবিস্মরনীয় তাঁর অবদান,
সার্জিক্যাল বিজ্ঞানে হ্যামিল্টনের শিখা অনির্বাণ।

ত্রিশ হাজার সার্জনের শিক্ষাগুরু ডাঃ হ্যামিল্টন,
কিংবদন্তি এই ডাক্তার চিকিৎসা জগতের রতন।
তাঁর নশ্বর শরীর ভার্সিটি ক্যাম্পাসে দাফন করে,
এ বিরলতম সম্মান একমাত্র হ্যামিল্টনের তরে।
কেবল পুঁথিগত শিক্ষা-টুকুই জীবনে যথেষ্ট নয়,
সার্জনগিরিতে নিরক্ষর হ্যামিল্টনের বিশ্ববিজয়।
রাজমিস্ত্রীর যোগাড়ে হিসেবে হ্যামিল্টন অনন্য,
ঘাস কাটা শ্রমিক হিসেবে তিনি বিশ্বে অগ্রগণ্য।
বিশ্ব বিখ্যাত সার্জনদের সার্জন হ্যামিল্টন স্যার,
বিশ্বে বিরল সব মাঠের এমন সেরা খেলোয়াড়।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ