ঢাকা ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১০ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি
প্রকাশিত: ২:০৬ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২, ২০২০
ঝিনাইদহ সংবাদ ডেস্ক:
প্রথমে দেখে মনে হতে পারে এটি কোন বাগান বা ঘন জঙ্গল। দেখে মনে হয় এখানে হয়তো আবাদ করা হয় সবজি। কিন্তু ঠিক তা নয়, এখানেই এক সময় খেলা করতো শিশুরা। পরিবারের নারী সদস্যদের এই স্থানেই ঘুরে কাটতো সারাদিন। কিন্তু এখন সেখানে জঙ্গল আর ঘন বাগান। ভাই হত্যার বিচার চেয়ে মামলা করায় প্রভাবশালী ইউপি চেয়ারম্যান ও তার পেটুয়া বাহিনীর হামলা, অত্যাচারে গত ৬ বছর ধরে বাড়ি ফিরতে না পারায় বাড়ির উঠানে এখন জঙ্গল সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে মামলার স্বাক্ষী হওয়ায় তারাও এখন বাড়ি ছাড়া। বাড়ির উঠানে চরানো হচ্ছে গরু। বসত ঘর বানানো হয়েছে আসামী পক্ষের গরুর গোয়াল। বলছি ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার বগুড়া গ্রামের ৬ টি পরিবারের দুর্দশার কথা। বগুড়া ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামের অত্যাচারে বাড়িছাড়া ওই ৬ টি পরিবার।
সরেজমিনে এলাকা ঘুরে জানা যায়, ২০১৪ সালে ২৫ নভেম্বর শৈলকুপার রতœাট গ্রামের মাঠ থেকে বগুড়া গ্রামের জালাল উদ্দিনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। আগের দিন দুপুরে তাকে ধরে নিয়ে গিয়ে পিটিয়ে ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় পরদিন নিহতের ভাই নাসির উদ্দিন ইদু বাদি হয়ে শৈলকুপা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর স্থানীয় প্রভাবশালী চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ও তার সহযোগিরা শুরু করে বাড়ি ঘর ভাংচুর, লুটপাট। হত্যা মামলার বাদি ও স্বাক্ষীদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে বাড়ী ঘর ভাংচুর শুরু করে। মামলা তুলে নিতে শুরু হয় হত্যার হুমকি। ভাই হত্যার বিচার চেয়ে মামলা করার অপরাধে ছাড়তে হয় বাড়ি। মামলার বাদি ইদু, স্বাক্ষী সায়েম শেখ, কাজী গোলাম নবী, কাজী মোহাম্মদ আলী, কাজী বিল্লাল হোসেন, তানিয়া খাতুন, সাহাবুদ্দিন অত্যাচার সইতে না পেরে বাড়ি ফেলে স্বজনদের নিয়ে পালিয়ে যায়। ৬ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও তারা বাড়ি ফিরতে পারেনি। সম্প্রতি বাড়িতে ফিরতে চাইলে দেওয়া হচ্ছে হুমকি, মামলা তুলে বাড়ি উঠতে হবে বলেছে চেয়ারম্যান। বাড়িতে জঙ্গল হয়ে গেছে, কোন কোন বাড়িতে এখন গরু চরানো হচ্ছে। বাড়ির বারান্দায় জন্মেছে ঘাষ।
বাদী ইদু বলেন, ভাই হত্যার বিচার চেয়ে আজ ৬ বছর বাড়ি ছাড়া আছি। বাড়িতে যাওয়ার চেষ্টা করলে চেয়ারম্যান তার লোকজন নিয়ে হামলা চালায়। এমনকি আদালতে স্বাক্ষী দিতে গেলেও আসামীরা মারধর করতে যায়। বাড়ি যাওয়া তো দুরের কথা এখন আদালতে যাওয়ার সাহসই পাচ্ছি না। আমি বাড়ি যেতে পারি না পারি আমার ভাই হত্যার বিচার চাই।
স্বাক্ষী কাজী মোহাম্মদ আলী বলেন, হত্যা মামলার স্বাক্ষী হওয়ার কারণে পরিবার পরিজন নিয়ে এত বছর বাড়ি ছাড়া। বাড়িতে ফিরতে চাইলে চেয়ারম্যান বলছে, আগে মামলা তুলতে হবে তারপর বাড়িতে ফিরতে হবে। কয়েকদিন আগে বাড়িতে ফিরতে চাইলাম। মামলা প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত বাড়িতে উঠতে দিবে না বলে আসামীরা হুমকি দিচ্ছে।
অপর স্বাক্ষী কাজী বিল্লাল হোসেন বলেন, প্রায় ৩০ বিঘা জমি আর বাড়ি পড়ে আছে আমাদের। বাড়িতে যেতে পারছি না। উপরন্তু আমাদের জমিতে চেয়ারম্যান ফুটবল খেলার মাঠ বানিয়েছেন।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর হস্তক্ষেপ কামনা করে স্বাক্ষী সাহাবুদ্দিন বলেন, যাদের ঘর নেই বর্তমান সরকার তাদের ঘর তৈরী করে দিচ্ছে। আর আমাদের ঘর বাড়ি থাকা স্বত্তেও বছরের পর বছর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বাড়ী ছাড়া। আদালতে মামলা চলমান রয়েছে, পুলিশ তদন্ত করে রিপোর্ট দিলে সে অনুযায়ী বিচার হবে। আমরা বিচার চাওয়ায় আজ বাড়ি ছাড়া। তাই পুলিশ সুপারসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে বলতে চাই, আমরা বাড়ি ফিরতে চায়। ফিরতে চায় স্বাভাবিক জীবনে।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম বলেন, হত্যা নিজের করে আমাদের নামে মামলা দিয়েছে। মানুষ যখন জানতে পেরেছে তারা নিজেরাই হত্যা করেছে জনরোষের ভয়ে তারা নিজেরাই বাড়ি থেকে পালিয়েছে। আমরা কাউকে মারিও নি, তাড়াইওনি।
এ ব্যাপারে শৈলকুপা থানার ওসি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ওটা আমাদের কোন বিষয় না। কে বাড়ি উঠবে না উঠবে, কে বাড়ি থাকবে না থাকবে সেটা তাদের ব্যাপার। এটা আমাদের দ্বায়িত্ব না।
সম্পাদক – মাহমুদ হাসান টিপু
নির্বাহী সম্পাদক – পিন্টু লাল দত্ত
বার্তা সম্পাদক – সোহাগ আলী
www.jhenaidahsongbad.com
jhenaidahsongbad@gmail.com
প্রকাশক- জাহিদুল ইসলাম বাবু মিয়া
ব্যবস্থাপনা পরিচালক – মোঃ মজিবুর রহমান সরকার
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী সড়ক,ঝিনাইদহ
০১৭১১২৬০৩৯৩ / ০১৭১১৪৫২০৫১
Design and developed by zahidit.com