ঢাকা ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৬ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি
প্রকাশিত: ১০:২৮ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২০
নয়ন খন্দকার, কালীগঞ্জ ॥ ২৪ সেপ্টেম্বর’২০২০
২০০৪ সালে মাটির ব্যাংক ভেঙ্গে কিনেছিলেন ৩৩ টি মোজাফ্ফর লিচুর চারা। সেই চারা লাগিয়েছিলেন ২ বিঘা জমিতে। ২০০৯ সালে সেই গাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকার লিচু বিক্রি করতে শুরু করেন। এরপর পৈত্রিক ১২ বিঘা জমি আর লিচু বিক্রির টাকায় লিজ নিয়ে বর্তমানে ২৫ বিঘা জমিতে সমন্বিত দেশি বিদেশি ফলের আবাদ গড়ে তুলেছেন বাংলাদেশ পুলিশ বিভাগে কর্মরত উপসহকারি পুলিশ পরিদর্শক গোলাম রসুল। তিনি ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার কাষ্টভাঙ্গা ইউনিয়নের মাসলিয়া গ্রামের মৃত আবুল হোসেন বিশ^াস ছেলে।
তার সমন্বিত ১৬ বিঘা জমিতে রয়েছে চায়না কমলা, দার্জিলিং কমলা, মেন্ডারিন কমলা, বারি-১ মাল্টা, কাশ্মরী আপেল কুল, বল সুন্দরী কুল, মিশরী বারোমাসি শরিফা, থাই শরিফা, সিডলেচ সুগন্ধি কাগজি লেবু, মোজাফফর লিচু, চাইনা-২ লিচু, থাই-৫ পেয়ারা, থাই-৭ পেয়ারাসহ বিভিন্ন ফলের আবাদ। বাকি ৯ বিঘা জমিতে ড্রাগনসহ অন্যান্য ফলের আবাদ করার জন্য প্রস্তুতি চলছে। এ বছর আম্ফানের কারনে লিচু বিক্রি করতে পারেননি। তারপরও দেড় লাখ টাকার লিচু বিক্রি হয়েছে। তিন বিঘা জমির আবাদ করা কুল বিক্রি করেছেন ৫ লাখ ও সাড়ে ৭ বিঘা জমিতে রোপন করা পেয়ারা বিক্রি করেছেন প্রায় ৮ লাখ টাকা। চলতি মৌসুমে এবার এসব বাগান থেকে প্রায় অর্ধকোটি টাকার ফল বিক্রির আশা করছেন তিনি।
গোলাম রসুল জানান, ছোট বেলা থেকে তার মা ও বড় ভাই মৃত আব্দুল মান্নান মাস্টারের ফলজ ও বনজ গাছ লাগানো এবং পরিচর্যা দেখে তিনি গাছপ্রেমী হয়ে পড়েন। এরপর একই গ্রামের মন্টু চাচার কামরাঙ্গা, জলপাই, কদবেল গাছ লাগানো দেখে লোভে পড়ে যান। একবার ্ঈদের দিন মামা বাড়িতে যান এবং মামা মামির দেয়া ২৭ টাকা দিয়ে একটি কামরাঙ্গা গাছ কিনে বাড়িতে রোপন করেন। সেই গাছের ফল দেখেই তিনি অনুপ্রানিত হন। এখন তিনি বিভিন্ন ফলের আবাদ করে কোটিপতি চাষী নামে খ্যাতি পেয়েছেন।
২০০৪ সালে বাড়ির পাশের নুরুল ইসলাম তার ২ বিঘা জমিতে লিচু গাছ লাগানোর পরামর্শ দেন গোলাম রসুলকে। তারই পরামর্শে বাড়ির কাউকে কিছু না বলে মাটির ব্যাংক ভেঙ্গে যশোর জেলার বসুন্দিয়া থেকে তিনি ৩৩টি মোজাফ্ফর জাতের লিচু গাছ ক্রয় করে তা লাগান। তখন বাড়ির অভিভাবকরা তাকে বকাঝকাসহ অনেকে তাকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করেন। এরপর ২০০৫ সালে তিনি বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে কনস্টবল পদে যোগদান করেন। পরে পদোন্নতি পেয়ে তিনি পুলিশের উপসহকারি পুলিশ পরিদর্শক হন। ২০০৯ সালে সেই লিচু গাছ থেকে লিচু পেতে শুরু করেন। প্রতিবছর লাখ লাখ টাকার লিচু বিক্রি করছেন জীবনের প্রথম লাগানো লিচু বাগানের টাকায় বাড়ির গেটও করেছেন বলে জানান।
চাকুরীর কারনে তিনি বাড়িতে না থাকতে পারলেও তার দিক নির্দেশনায় তার ভাই মিজানুর রহমান মাস্টার ও অন্যান্য ভায়েরা ফলের বাগান দেখাশুনা ও পরিচর্যা করছেন। ছুটিতে এসে তিনি এসব ফলের বাগানে পড়ে থাকেন।চলতি বছর ২ বিঘা জমিতে মিসরি বারোমাসি শরিফা ও থাই বারোমাসি শরিফা ফলের গাছ লাগিয়েছেন। সেই গাছের মধ্যে সাথি ফসল হিসেবে লাগিয়েছেন শীতকালীন পাতাকপি। ২ বিঘা জমিতে ১৫০ টি শরিফা গাছ লাগানো হয়েছে। যার দাম পড়েছে ৭৫ হাজার টাকা। এছাড়া সাথী ফসল হিসেবে ৭হাজার ৫শ টাকার শীতকালীন কপি লাগিয়েছেন । তিনি জানান, শরিফা গাছ লাগানোর ২ বছর পর পরিপূর্ণ ফল পাওয়া যায়। প্রতিবছর সেখানে থেকে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকার শরিফা ফল পাওয়া যাবে। আর শীতকালীন সাথী ফসর থেকে ৭০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা ফলন পাবেন। এছাড়া তিনি ৫ লাখ টাকার বিভিন্ন ফলের চারাও বিক্রি করেছেন।
তার সেই ক্ষেতে কাজ করছেন স্কুল কলেজের শিক্ষিত যুবকরা। করোনার মধ্যে স্কুল কলেজ বন্ধ থাকায় মাসলিয়া গ্রামের কামরুল, সাগর, রাতুল, রানা, ইয়াসিন, সামাউল, মাহাবুর, সাহেব আলীর মত প্রায় ৫০ জন শিক্ষিক স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা তার বাগানে পার টাইম কাজ করেন। একজন পেয়ারায় ১২শ পলি বাঁধলে সে ৫শ টাকা করে পায়। এছাড়া বাগান বা ক্ষেত্রের আগাছ পরিস্কার করার জন্য আলাদাভাবে দিনমজুরা কাজ করেন।
মাসলিয়া গ্রামের সিরাজুল ইসলাম, মিজানুর রহমান, সাইদুল ইসলাম, কামাল হোসেন, বিল্লাল হোসেনসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, গোলাম রসুলের ফলের বাগান দেখে তারাও উদ্বুদ্ধ হয়ে ফলের বাগান করেছেন। গোলাম রসুলের কাছ থেকে বিভিন্ন ফলের চারাও কিনেছেন। গ্রামের এসব চাষীরা আরো বলেন, গোলাম রসুল সরকারি চাকুরী করেন। এলাকায় না থেকেও তিনি যখন ফলের আবাদ করতে পারছেন তাহলে আমরা কেন পারবো না। গোলাম রসুল আমাদের গ্রামের একজন আদর্শ ছেলে। চাকুরী করেও তিনি কৃষিতে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা আলী হোসেন বলেন, গোলাম রসুল ও তার ভায়েরা বিভিন্ন প্রকার ফলের আবাদ করে কৃষিতে অবদান রাখছেন। আমিও তাদের চিনি। তাদের বাগানেও একাধিকবার গিয়েছে এবং কৃষি বিষয়ক পরামর্শ দিয়েছি। এছাড়া গোলাম রসুল ভাইয়ের সাথে মোবাইল ফোনে প্রায়ই আমার যোগাযোগ হয়। চাকুরী করেও তিনি একজন বড় চাষী।
সম্পাদক – মাহমুদ হাসান টিপু
নির্বাহী সম্পাদক – পিন্টু লাল দত্ত
বার্তা সম্পাদক – সোহাগ আলী
www.jhenaidahsongbad.com
jhenaidahsongbad@gmail.com
প্রকাশক- জাহিদুল ইসলাম বাবু মিয়া
ব্যবস্থাপনা পরিচালক – মোঃ মজিবুর রহমান সরকার
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী সড়ক,ঝিনাইদহ
০১৭১১২৬০৩৯৩ / ০১৭১১৪৫২০৫১
Design and developed by zahidit.com