বিশিষ্ট কৃষিবিদ ও কবি ড. খানের একটি অনবদ্য কবিতা “অশ্রু বন্যা”।

প্রকাশিত: ৯:৩০ পূর্বাহ্ণ, জুন ১৮, ২০২০

বিশিষ্ট কৃষিবিদ ও কবি ড. খানের একটি অনবদ্য কবিতা “অশ্রু বন্যা”।
-ড. খান মোঃ মনিরুজ্জামান

আষাঢ় বরিষনে ধবলী ভিজিলোরে মাঠময়,
আমার ছেলে তা দেখিয়ে দেখিয়ে মোরে কয়,
‘ওদের কষ্টে মালিকের কেন হয়না বোধোদয়’।
এমনি কত শত শত মানবতার হবে পরাজয়।
ধবলীর কষ্টে মোর ছোট্ট ছেলের কাঁদে হৃদয়,
মাতৃক্রোড়ে বাছুরটা কাটাচ্ছে তার কষ্ট সময়।
অবলা ধবলীর কষ্টে কেন যে তব কষ্ট  না হয়,
সৃষ্টির উপর অনাসৃষ্টিতে যে তোমার পরাজয়।

গোছলে বাঁধা ধবলী, খুঁটি মাটিতে আটকানো,
বরিষনে তারে কষ্ট দেওয়ার মানে হয় কোনো?
ও ভাই ধবলীর মালিক আমার মিনতি শোনো-
বরিষনে ধবলীকে মাঠ থেকে নিরাপদে আনো।
তোমার কারণে অপরের কষ্টের লাগাম টানো,
তোমার জীবনে বন্ধুরে, মানবতার বিজয় মানো।
ধবলীর কষ্টে তোমার লাভ-লসের অংক জানো,
কাউকে দুখে রেখে সুখে থাকা যায়না কখনো।

তোমার সুখলাগি যে ধবলীর ধরনীতে আসা,
সে কেন পাবেনা তোমার সহৃদয় ভালোবাসা।
যার তরে তোমার সুখ সমৃদ্ধি শৌর্যবীর্য খাসা,
তার আশাপথে তোমার হোকনা যাওয়া-আসা।
যার দুধে পুষ্ট তোমার সাধের অধর দেহবাসা,
তার বদৌলতে সামসনে তুমি খেলেছো পাশা।
তব তনুর রক্তমাংসে ধবলীর রক্তমাংস মিশা,
মরার পরে তার গায়ের চামড়া তব পায়ে পিষা।

দুর্বল তাকিয়ে তব পানে ওগো প্রিয় সবল ভাই,
তোমারে সেবিতে আমি দুর্বল তোমারে জানাই।
সারাদিন বৃষ্টি জলে ভিজে আমি বড় কষ্ট পাই,
বরিষনে গোবাশ্ম গোয়ালে খাবারসহ দিও ঠাঁই।
আমার দুগ্ধের কিছুটা মোর বাচ্চার জন্যে চাই।
বাকি সবটুকু নিও, আমার কোন আপত্তি নাই।
আমাকে কষ্টে রেখে তোমার লাভ কি বল তাই,
আর ভিজায়ে না অশ্রু বন্যায় তোমারে শুধাই।

রচনাকালঃ ১৮/০৬/২০২০ খ্রি.
সময়কালঃ ৭.৩০ এএম।

(শানে নযুল – মুসলধারে বৃষ্টি। বাড়ন্ত সকালে বেডে বসে চা খাচ্ছি। আমার বড় ছেলে সামি হাত ধরে জানালা ধারে নিয়ে মাঠে গোছড়ে বাঁধা কাক ভেজা একটা গাভী দেখালো। গাভীটি হাম্বা রবে ডাকছে আর তার বাচ্চাসহ গোছড় উগড়ে হয়তো গোয়ালে যাবার ব্যর্থ চেষ্টা করছে। তার মালিক কোথায় কে জানে? সে দুধ খাবে, বাচ্চা নিবে এর বেশি এই নির্বোধ ইতর প্রাণীটির জন্য তার আর কি দায়িত্বই বা আছে? তাই অগত্যা প্রাণীটি শুয়ে বাচ্চাকে কোলের ভিতর লুকায়ে আদর করছে আর ডেকে হয়তো মালিকের ব্যর্থ দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। চোখ ফেটে জল এল। গাভীটির মত আমার দুইটা বাচ্চা আছে ইনশাআল্লাহ। মনে পড়ে গেল পৃথিবীর দুইটা শ্রেনী। মালিক আর ভৃত্য। এই আটপৌড়ে জীবনে কত ভৃত্যের কত আহাকারই তো দেখলাম! তাই বেদনাক্লান্ত আসরে আমার এ ক্ষুদ্র নিবেদন অসহায়ের করকমলে।)

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ