মেধাবী ছাত্র সোহেল বাঁচতে চাই

প্রকাশিত: ৮:২৯ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৩, ২০১৯

মেধাবী ছাত্র সোহেল বাঁচতে চাই

এম.সাইফুজ্জামান তাজু, হরিণাকুণ্ডু

সোহেল রানা, হতদরিদ্র পরিবারের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মেধাবী ছাত্র। তার দুটি কিডনীই নষ্ট, চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা।

হতদরিদ্র পরিবারের ভাঙ্গা ঘরের চাঁদের আলো সোহেল রানা। ছোট বেলা থেকেই প্রচন্ড মেধাবী, বুদ্ধীদিপ্ত আচারণেই নিরক্ষর বাবা-মা বুঝতে পারে প্রচন্ড মেধাবী ছেলেটা। বড় হয়ে সু-শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে ছেলে একদিন আলো ছড়াবে সমাজে, ঘুচে যাবে পরিবারের দুঃখ দূর্দশা। এ আশায় দিন আনা দিন খাওয়া বাবা ছেলে কে পাঠাই স্কুলে। কষ্ট করে পড়া লেখা করাতে থাকে। অভাবের সংসার ছেলের পড়ালেখার খরচ যোগাতে হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম করে হতদরিদ্র বাবা। কখনও হয়তো তিন বেলা খাবারও জোটেনা সংসারে। তবু ছেলেকে লেখাপড়া শেখানোর দৃঢ় প্রত্যয়ে সব কষ্ট জয় করে এগিয়ে যায়।
ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে ভাঙ্গা ঘরের চাঁদের আলো সোহেল রানা। ২০১১ সালে এস.এস.সি তে জিপিএ-৫ পেয়ে বাবা মায়ের মুখে হাঁসি ফোটাই সে। ২০১৩ সালে কৃতিত্বের সাথে এইচ.এস.সি পাশ করে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজী বিভাগে ভর্তি হয়। শুরু হয় উচ্চ শিক্ষিত হয়ে পরিবারের মুখে হাঁসি ফোটানো ও সমাজের সেবা করার লড়াই। টিউশনি করে পড়াশোনা করতে থাকে মেধাবী সোহেল। কিন্তু কে জানতো তার দেহে বাসা বাঁধবে দূরারোগ্য ব্যাধী। ২০১৬ সালে অনার্স তৃতীয় বর্ষে অধ্যায়নরত অবস্থায় সোহেলের দেহে ধরা পড়ে পযৎড়হরপ করফহু ফববংবধংব (ঈকউ) রোগ। ফলে মেধাবী সোহেল ও তার পরিবারে নেমে আসে ঘোর অমানিশা।
বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মেধাবী ছাত্র সোহেল রানা ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার গোপিনাথপুর গ্রামের দরিদ্র কৃষক জমির মালিতার ছেলে। তার দুটি কিডনিই সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে সে। ২০১৬ সাল থেকে এ রোগে ভুগছে সে। তার চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা। দরিদ্র কৃষক পিতার পক্ষে সোহেলের চিকিৎসার এই বিশাল ব্যায় ভার বহন করা সম্ভব নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সহপাঠি ও স্কুল জীবনের বন্ধুরা এগিয়ে এসেছিল তার সহযোগিতায়। তাদের সহযোগিতায় দেশ বিদেশে চিকিৎসা করিয়েছে সে।
২০১৬ সালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের কিডনী ও মেডিসিন রোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ অধ্যাপক এ.কে.এম মনোয়ারুল ইসলামের তত্বতাবধানে সপ্তাহ খানেক চিকিৎসা শেষে ঢাকার ন্যাশনাল কিডনি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করে সোহেল রানা। সেখানে তার শারীরিক অবস্থা কিছুটা উন্নতি হলে চিকিৎসকের পরামর্শে ২০১৮ সালের মার্চ মাসে কলকাতার এ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি হয়ে ডাক্তার এম.কে গোয়েনকার চিকিৎসা নেন সোহেল। তিনিও দ্রুত কিডনী সংযোজনের পরামর্শ দেন। এছাড়াও ঢাকার শ্যামলীতে অবস্থিত সেন্টার ফর কিডনী ডিজিজেস এর ইউরোলজি হাসপাতালের সহকারী প্রফেসার ডাক্তার রেজওয়ানুর রহমান, স্যার সলিমুল্ল্যা মেডিকেল কলেজ, মিডফোর্ড হাসপাতালের সহযোহী অধ্যাপক ডাঃ ফজলে করিম সহ দেশ বিদেশের বিভিন্ন হাসপাতালের বিশেজ্ঞ ডাক্তারের চিকিৎসা নিয়েছেন মেধাবী এই ছাত্র। বর্তমানে চিকিৎসক দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন ও কিডনী রোগ বিশেজ্ঞ ডাঃ মেজবাহ উদ্দীন নোমানের চিকিৎসাধীন আছে সে। তিনি বলেন, দ্রুত তার দেহে কিডনী সংযোজন প্রয়োজন। কিন্তু সোহেলের হতদরিদ্র পিতার পক্ষে তার চিকিৎসার এই বিশাল ব্যায়ভার বহন করা সম্ভব নয়। বর্তমানে চিকিৎসকের পরামর্শে সাময়িক বেঁচে থাকার প্রত্যয়ে তার দেহে সপ্তাহে ২ দিন ডায়ালাইসিস করে কোন রকমে বেঁচে আছে মেধাবী ছাত্র সোহেল। এতেও তার খরচ সপ্তাহে ৮ হাজার টাকা। সামান্য কৃষি জমি বিক্রিয় করে এ চিকিৎসা চালাচ্ছেন সোহেলের হত দরিদ্র বাবা।

মেধাবী ওই ছাত্রের স্বপ্নের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের প্রধান প্রফেসর ড. সালমা সুলতানা সোহেল কে নিজের সন্তান উল্লেখ করে বলেন সোহেল অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র। সে দ্রুত সুস্থ হয়ে আবার ফিরে আসবে ক্যাম্পাসে, তার জন্য এই প্রার্থনা করি।

কথা হয় সোহেলের বাবা কৃষক জমির মালিতার সাথে। তিনি বলেন, অনেক কষ্ট করে ছেলেকে পড়া লেখা করাচ্ছিলাম। সে শিক্ষিত হয়ে বড় ডিগ্রি নিয়ে পাশ করবে, বড় চাকুরী করবে, ঘুচিয়ে দিবে পরিবারের সব অভাব। কিন্তু আমার কপালে সুখ নেই, সব সম্বল ব্যায় করে ছেলের চিকিৎসা করিয়েছি। আর পারছিনা বলে অঝরে কাঁদতে থাকেন সোহেলের বাবা। কাঁদতে কাঁদতে তিনি আরও বলেন আমার ছেলেকে বাঁচাতে পারলাম না। সমাজের অনেক দানশীল মানুষ আছেন তাদের কাছে আমি ভিক্ষা চাই। দয়া করে আমার ছেলেকে বাঁচান। শুনেছি আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন দয়ালু ও মমতাময়ী মা, আমি তার কাছে আমার ছেঁলে কে বাঁচাতে সহযোগিতা চাই।

বিছানায় শুয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়া দরিদ্র মেধাবী ছাত্র সোহেল রানা বলেন, আমি বাঁচতে চাই, দয়া করে আমাকে বাঁচান। সমাজের বৃত্তবান মানুষের কাছে আমি সহযোগিতা চাই। দেশবাসির সহযোগিতায় আমি সুস্থ হয়ে আবারও ফিরতে চাই আমার স্বপ্নের ক্যাম্পাসে।

আজও সোহেল স্বপ্ন দেখে আবার ফিরবে সে তার স্বপ্নের শিক্ষালয়ে। প্রশাসনের একজন উচ্চ পদচ্ছ কর্মকর্তা হয়ে বাবা মায়ের মুখ উজ্জল করবে, সেবা করবে সমাজ ও রাষ্ট্রের। সোহেলের এই স্বপ্ন পূরণ হবে কি?

সোহেলকে সহযোগিতা করার ঠিকানাঃ সোহেল রানা, সঞ্চয়ী হিসাব নং ২৪০৫৯০১০১২৯৩২, সোনালী ব্যাংক লিমিটেড, হরিণাকুণ্ডু শাখা, ঝিনাইদহ। মোবাইলঃ ০১৭৪৩-৭০০৫৪৭

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ